সাক্ষাৎকার <
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে মিয়ানমারে। অং সান সু চিসহ ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে সামরিক জান্তা। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ কী প্রভাব পড়তে পারে তা জানতে সুপ্রভাতের পক্ষ থেকে কথা হয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব:) এমদাদুল ইসলামের সাথে।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ : নভেম্বর মাসের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দলের বড় জয় কি তার জন্য কাল হলো?
এমদাদুল ইসলাম : অং সান সু চিকে নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয় ছিল, এবারের নির্বাচনে তার দলের ভূমিধস বিজয় হতে পারে। নির্বাচনে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে সেই আশংকাই প্রমাণিত হয়। ভূমিধস এই বিজয় নিয়ে সু চি ক্ষমতায় গেলে সংবিধানের অনেক ধারায় পরিবর্তন আনতে পারেন বলে সেনাবাহিনীর ভয় ছিল।
কিন্তু নির্বাচনে বড় ধরনের কারচূপি হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিল সেনাবাহিনী। সেজন্য তারা আইনের আশ্রয়ও নেয়। কিন্তু বিষয়টি সুরাহা হওয়ার আগেই সু চি পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকেন। আজ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। পার্লামেন্ট ডাকার মাধ্যমে সু চির ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে সেই আশংকাতেই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল।
সুপ্রভাত : নির্বাচনে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ সু চিকে ভোট দিয়েছে। এ অবস্থায় সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সেখানে গণবিক্ষোভ হতে পারে কি-না?
এমদাদুল ইসলাম : ১৯৪৮ সাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত। মাঝখানে ২০১৫ সালে সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল ক্ষমতায় এসেছিল। যদিও ইতোমধ্যে দেশবাসীকে বিক্ষোভের জন্য আহবান জানিয়েছেন সু চি তবে, সেখানকার মানুষ সামরিক শক্তির অনুগত। ভয়ে কেউ রাস্তায় নামবে না। আর দেশটিতে অনেকগুলো জাতি, উপজাতি রয়েছে। সকলজাতি কখনো একই ছাতাতলে আসবে না। প্রত্যেক জাতি তার নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে কাজ করে। বহুধা বিভক্ত এই জাতিকে সামরিক বাহিনী ছাড়া কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। সুতরাং, সামরিক অভ্যুত্থানে বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
সুপ্রভাত : বিশ্ব সম্প্রদায় এই সামরিক অভ্যুত্থানের সমালোচনা করছে। তারা সু চিকে মুক্ত করে দেয়ারও কথা বলছে। সামরিক বাহিনী কি এই আহবানে সাড়া দেবে?
এমদাদুল ইসলাম : মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পশ্চিমা বিশ্ব বা বিশ্ব সম্প্রদায় কি বললো তাতে কোনো গুরুত্ব দেয় না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায় অনেক বলেছে, কিন্তু তারা কি শুনেছে? তারা তাদের গতিতেই চলবে। এখন এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং পরবর্তীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলছে। এখন দেখা যাক তারা কতদিন ক্ষমতায় থাকে।
সুপ্রভাত : এই সামরিক অভ্যুত্থানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনো জটিলতা হতে পারে কি-না?
এমদাদুল ইসলাম : এখানে পজিটিভ ও নেগেটিভ দুটো বিষয় ঘটতে পারে। অর্থাৎ শঙ্কা যেমন রয়েছে তেমনি সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রথমত: যেহেতু সামরিক সরকার, তাই তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি স্থগিত রেখে দিতে পারে। আর তা হলে বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ হবে।
দ্বিতীয়ত: বিশ্বসম্প্রদায়ের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য তারা দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করে দিতে পারে। তারা বলতে পারে সু চি এতোদিন যা পারেনি আমরা তা দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এটা হলে তা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে রাখা অবশ্যই আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।