নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘পণ্য আসা-যাওয়ার গেটওয়ে এই চট্টগ্রাম। তাই এই অঞ্চলকে আরো গুরুত্ব দেয়া দরকার। বিশ্বের ১৫১টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়। আমাদের সিরামিক প্রোডাক্ট আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই জনপ্রিয়। পশ্চিমা দেশগুলোর ফাইভস্টার হোটেলেও বাংলাদেশি সিরামিক পণ্য দেখতে পেয়েছি। পাটজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ এগিয়েছে। আইটি সেক্টরে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করতে হবে। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ আমাদের তৈরি বিভিন্ন প্রোডাক্টগুলো বাজার দখল করে নিচ্ছে। আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের হাত ধরে জনগণের সেবায় রাজনীতিতে এসেছি। আজ আফ্রিকা, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়ার মত দেশে আমাদের তৈরি পণ্যের মেলা হয়। প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য সেক্টরে জোর দিয়েছে। বাণিজ্য মেলার মত এই ধরনের ছোট ছোট মেলার মধ্যদিয়ে আমাদের পণ্যগুলোর বাণিজ্যিক প্রসারতা বাড়াতে হবে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজিত ৭ম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রপ্তানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল সোমবার নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশে এক নিয়ম, আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আরেক নিয়ম তা গ্রহণযোগ্য নয়। সারাদেশের কোথাও লোড এক্সেল নেই, কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লোড এক্সেল বসানো হয়েছে। এটা ঠিক নয়। পণ্য পরিবহনে যদি এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাহলে পণ্যের ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের জন্যে হবে কষ্টকর। আমি আবারো সড়ক মন্ত্রীকে কথাটা বলবো। এই সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে। সারাদেশে যেভাবে আছে, সেভাবেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে করা হোক।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানির সুযোগ হয়েছে এবং তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। আমাদের একমাত্র পোশাকশিল্প ৮৩-৮৪ শতাংশ। আমরা চাইছি অন্যান্য অফিসিয়াল আইটেমগুলোর রপ্তানি বাড়াতে। প্রত্যেকটি পণ্যের রপ্তানি অন্তত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাক। তবে সুখের বিষয় যে, গত দুই বছরে আমাদের চার-পাঁচটা আইটেম বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, লাইট, মেশিনারিজ, আইটি প্রোডাক্ট, আইসিটি সেক্টরের পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট আন্তর্জাতিক বাজারে বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
সামনের দিনগুলো সম্ভাবনার জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এক সময় বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ছিলাম। ব্যবসায়ী ও রাজনীতির মধ্যে মিশে আছি। বাণিজ্যের আমাদের ভাগ্যটা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।
এদিকে বাজারে ৫ লিটার তেলের দাম হাজার টাকার ওপরে, এরমধ্যে আবার প্রতি বোতলে তেল তিনশ’ গ্রাম করে কম থাকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বিষয়টি ভোক্তা অধিকার দেখবে। আমি বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা দেবো।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক চসিক মেয়র ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, আমরা ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনীতি ও ভিন্নমতের হতে পারি। কিন্তু আমরা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশে চাই যেন বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। দেশের মানুষ শান্তিতে থাক। আমরা সবাই যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারি এই প্রত্যাশা করি। কিন্তু তা পূরণ করতে হলে ব্যবসায়ীদের একে অন্যের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। আমরা যেন আমাদের প্রোডাক্টগুলো যদি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে পারি। যারা দেশের বাইরে কাজ করছে, তাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের প্রোডাক্টগুলো যেন আন্তর্জাতিকভাবে সফলতা অর্জন করতে পারে।
সিএমসিসিআই সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বাণিজ্য মেলা শুধুমাত্র পণ্যের কেনা বেচার মেলা নয়। এই বাণিজ্য মেলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করণ ও তার সাথে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করা। সেই দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় এই বাণিজ্য মেলা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়নে একটি সুদূরপ্রসারী মাইল ফলক হিসাবে কাজ করে থাকে।
সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রতি বছর এই বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে থাকে। ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের সকল প্রকল্পের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হোক, দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে উন্নীত হোক, বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় উপস্থিত ছিলেন।