সংবাদদাতা, বাঁশখালী :
বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের মধ্যম সরল গ্রামে স্বামীর ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের কয়েকদফা বর্বর নির্যাতনের শিকার দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা ছিদ্দিকা ও তার বাপের পরিবার নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।
মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে আয়েশা, তার মা ও দুই ভাইয়ের ওপর অন্ততঃ ৩ দফা কিরিচ দিয়ে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রবাসী ভাই মো. সেলিম দেশে ফেরার আগে হামলার আশংকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু দেশে ফিরে ঠিকই সন্ত্রাসীদের কিরিচের কোপে আহত হয়েছেন। পাষ- স্বামী নিজ আইডি থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা অশ্লীল ছবিসহ কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ছড়িয়ে আয়েশার মানহানি করে চলছে। অভিযোগ আছে, আয়েশা ছিদ্দিকাকে পিটিয়ে ১০ দিন বয়সের কন্যাকে তার স্বামী সাতকানিয়া উপজেলার আলীনগর গ্রামে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। লোমহর্ষক এসব অপরাধ ঘটিয়ে ৩টি মামলা ও ৪টি জিডি’র সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গৃহবধূ আয়েশার পরিবার এবং মামলার বাদি ও সাক্ষীকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বাঁশখালীর সরল ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার উদ্যোক্তা পদে নিযুক্ত স্বামী আবু নাঈম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
জানা গেছে, ‘বাঁশখালীর সরল ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার উদ্যোক্তা পদে নিযুক্ত আবু নাঈম। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে ৩ ছেলে ও ১ কন্যা। সে মধ্যম সরল গ্রামের মৃত ফজল আহমদের পুত্র। ওই অবস্থায় ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল একই গ্রামের বাসিন্দা এবং সাতকানিয়া উপজেলার সাতকানিয়া সরকারি কলেজের অনার্স পড়–য়া ছাত্রী আয়েশা ছিদ্দিকাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। বর্তমানে আয়েশা ইতিহাস বিভাগের চর্তুথ বর্ষের ছাত্রী। আয়েশাকে অপহরণের পর তার পরিবার থানায় অপহরণের অভিযোগ করলে ওই বছরের ২০ মে পূর্বের বিয়ের কথা ও সন্তানের কথা গোপন রেখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী মৌলানা জামাল উদ্দিনের অফিসে ৫ লাখ টাকার দেন মোহরে প্রথম স্ত্রী’র অমতে আয়েশাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আবু নাঈম। এর পর আবু নাঈম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে আয়েশা’র পরিবারকে হুমকি ধমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকার যৌতুকের দাবি করেন। উপযুক্ত যৌতুকের দাবির নানা সালিশি বৈঠকে ব্যর্থ হলে এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল আয়েশা এক কন্যা সন্তান প্রসব করেন। কন্যা সন্তানের জন্মের ১০ দিনের মাথায় স্বামী আবু নাঈম ওই নবজাতককে সাতকানিয়া উপজেলার আলীনগর গ্রামের নিঃসন্তান এক পরিবারে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে আয়েশাকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর আয়েশা চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-১ এ মামলা করেন। এদিকে মামলা উঠিয়ে নিতে সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে সশস্ত্র হুমকি-ধমকিতে অতিষ্ঠ পরিবার। এর জের হিসেবে ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর আয়েশার ভাই মোরশেদুল আলমকে কিরিচের কোপে মাথায় হাড়কাটা জখম করে। এতে মোরশেদ বাদি হয়ে আয়েশার স্বামী আবু নাঈম ও সন্ত্রাসী মো. ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চলতি বছরের গত ২ সেপ্টেম্বর নারী নির্যাতন মামলার হাজিরা দিতে গেলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে আবু নাঈমকে হাজতে পাঠান। ১৩ সেপ্টেম্বর আবু নাঈমের আবারো জামিন চাওয়া হয় আদালতে। ওই সময় আদালতের বাইরে থাকা তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য মো. ফারুক, আবু ছৈয়দ, মো. বেলাল প্রকাশ্যে আয়েশা ও আয়েশার মা, ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় আয়েশার বাড়িতে গিয়ে মো. ফারুক, আবু ছৈয়দ, মো. বেলালসহ ৭/৮ জন সন্ত্রাসী দা-কিরিচ দিয়ে উর্পযুপরি কুপিয়ে আয়েশা ছিদ্দিকা (২৩), আয়েশার মা নুর নাহার বেগম (৫৩), ভাই মো. মোরশেদুল আলম (২৫) এবং গ্রীস প্রবাসী মো. সেলিম (৩৭) কে গুরুতর জখম করে। এদের প্রত্যেকের মাথায় ও ঘাড়ে কিরিচের কোপে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলে প্রতিবেশীরা দ্রুত স্থানীয় হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই ব্যাপারে বাঁশখালী থানায় আয়েশা বাদি হয়ে মামলা করলেও সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে অভিযোগ করেছেন। এদিকে স্বামী আবু নাঈম গত ২০ সেপ্টেম্বর আদালত থেকে জামিনে এসে আবারো ফেসবুকের নিজস্ব আইডি থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশার বিরুদ্ধে এডিটিং করা অডিও ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ছড়িয়ে মানহানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন।
নির্যাতিত গৃহবধূ আয়েশা ছিদ্দিকা বলেন, এ ঘটনায় ৩টি মামলা ও ৪টি জিডি করলেও প্রাণশংকায় ভুগছি। দেশের আইন আদালতের কাছে সন্তান ও আমার বাপের পরিবারের নিরাপত্তা চাই।’
আয়েশার স্বামী আবু নাঈম বলেন, ‘আমার নবজাতক কন্যা শিশুকে বিক্রি করিনি। সাতকানিয়া উপজেলার আলীনগরে এক মহিলাকে ভরণপোষণের দায়িত্ব দিয়েছি। ওই কন্যার খরচ বহন করি। আয়েশা ও আয়েশার পরিবারে কারা হামলা করছে জানি না। আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো ষড়যন্ত্রমূলক। কোন দোষ করিনি।’
সরল ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আবু নাঈম ও আয়েশা ছিদ্দিকার ঘটনা নিয়ে কয়েকবার ব্যর্থ সালিশি বৈঠক হয়েছে। এখন যে হামলা-মামলা চলছে তা কিছুতেই কাম্য নয়।’
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ আয়েশা ও আয়েশা’র পরিবারের দায়ের করা মামলাগুলো খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। কোন গৃহবধূকে নির্যাতন করে অপরাধী স্বামী পার পাবে না।’
এ মুহূর্তের সংবাদ