উজ্জ্বল বিশ্বাস, বাঁশখালী »
বাঁশখালীর পূর্বাংশে ৩৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মৌসুমের শুরুতে লিচু উৎসব চলছে। চড়া দামে বিক্রয় হচ্ছে লিচু। সেই সাথে আত্মীয়-স্বজনের বন্ধন রক্ষার্থে দেয়া হচ্ছে লিচুর ঝুড়ি। সর্বত্র হাট-বাজারগুলোতে পাইকারি-খুচরা লিচু বিক্রয়ের ধুম পড়ে গেছে। থোকা থোকা লাল লিচু গাছগুলোকে মনোলোভা সৌন্দর্য্যের আকর্ষণ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা প্রতিদিন বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে ট্রাকে লিচু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে।
বাঁশখালীর কালীপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জায়গায় খুব চাহিদা পাওয়ায় এই লিচু কিনতে কালীপুরেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। তবে লিচু চাষাবাদ শুধু কালীপুরেই সীমাবদ্ধ নয়, এখন পুরো বাঁশখালীতেই হচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই এই লিচু উৎসব মাত্র আর ৭ সপ্তাহ চলবে। অর্থাৎ লিচু গাছগুলো লিচু শূন্য হয়ে যাবে।
পাইকারি ক্রেতারা প্রতিদিনই বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকভর্তি লিচু ক্রয় করছে। বাঁশখালী প্রধান সড়কে লাই ও কারাঙ ভর্তি শুধু লিচু আর লিচু। চাষিরা লাই, কারাঙ ভরে লিচু নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আর পাইকারি ক্রেতারা গাড়ি থামিয়ে কিনে নিচ্ছে। এই লিচু ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে বাঁশখালীতে যেন লিচু উৎসব চলছে।
তবে এই উৎসব একমাস কিংবা দেড় মাসের বেশিদিন থাকে না। কারণ লিচু পাকা শুরু হলেই এক সাথে পাকা শুরু করে। গাছে পাকলেই ১/২ সপ্তাহের অধিক রাখা যায় না। তাতেই দ্রুত বিক্রয় হয়ে যায়। লোভনীয় রসালো এই ফলকে নিয়ে মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলেই এই সময়ে লিচু না নিলে কৈফিয়ত দিতে হয়। তাই হাট-বাজারে অধিকাংশ মানুষের হাতে প্রতিদিন শুধু লিচুর থলে শোভা পাচ্ছে। বাঁশখালীতে লিচু নিয়ে এই এক আর্কষণীয় আত্মীতিয়তা বিরাজ করছে। সব কিছু মিলিয়ে বলা যায় বাঁশখালীতে এখন লিচু উৎসব চলছে।
বাঁশখালীর লিচু ফলনজাত এলাকা কালীপুর, বৈলছড়ি, পুকুরিয়া, সাধনপুর, জলদি, চাম্বল, পুঁইছড়ি ইউনিয়নে ঘুরে চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অধিকাংশ গাছই পরিপূর্ণ। তবে মৌসুমের শুরুতে একটু বৃষ্টি হওয়ায় লিচু পাঁকতে একটি দেরি হয়েছে বলে চাষিরা জানান। তবে গত বছরের তুলনায় নতুন লিচু গাছের সংখ্যা বেড়েছে। লিচু পাকার সময় বৃষ্টি না হওয়াতে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ায় লিচুর দাম চড়া থাকায় চাষীরা লিচু বিক্রয় করে খবু স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। খুচরা ও পাইকারি লিচু এখন শত প্রতি ২৫০/৩০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। বাঁশখালীর পূর্বাংশে পুকুরিয়া থেকে পুঁইছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকার পাহাড়ি ও সমতল অংশে ব্যাপক হারে লিচুর ফলন হলেও কি পরিমাণ জমিতে লিচু ফলন হয় তারও সঠিক তালিকা নিরুপন করা যায়নি। স্থানীয় কৃষি অফিসে গিয়ে এই আলামতই লক্ষ্য করা গেছে ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে প্রায় সাড়ে ৭শ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদিত হয়। এবার তা আরো ৫ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব উৎপাদিত লিচুর মধ্যে কালীপুরের দেশীয় জাতের ৯০ ভাগ লিচু রয়েছে। বাকি ১০ভাগ লিচু চায়না-থ্রি ও চায়না-টু জাতের। এ দুই জাতসহ মঙ্গলবারিয়া নামে আরো একটি জাতের লিচু কলমীর মাধ্যমে চাষ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। চায়না থ্রি জাতের লিচুর শাস বড়, বিচি ছোট হয়। এ জাতের লিচুর ফলন একটু দেরিতে আসে। দেশীয় জাতের লিচুর বিচি বড়, শাঁস ছোট হয়। তবে এ জাতের লিচু খুব বেশি মিষ্টি হয়। প্রতিটি লিচু গাছ ৪০ থেকে ৪৫বছর পর্যন্ত বাঁচে। ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সে লিচু গাছ বেশি ফলন দেয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, ‘লিচু চাষের জন্য বাঁশখালীর মাটি খুবই উপযুক্ত হওয়ায় লিচুর ফলন হয় বেশি। ফলে চাষিরা লিচু বিক্রয় করে অধিক টাকা পেয়ে খুব খুশি।’
কালীপুরের লিচু চাষী বেলাল উদ্দিন জানান, তাঁর ৩শ গাছ নিয়ে কালীপুরে ২টি বাগান রয়েছে। সব কয়টি বাগানে কম বেশি লিচু ধরেছে। একই কথা জানিয়েছেন লিচু চাষী পালেগ্রামের নুরুল আলম, আজি আহম্মদ এবং কালীপুরের মো. ইউছুফ। তারা আরো জানান, গত বছর এই সময়ে তারা ৩/৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রয় করে আয় করেছেন। এ বছর আরো বেশি মুনাফা অর্জন হবে। তবে পাইকারিভাবে লিচু বিক্রয় হচ্ছে স্থানীয় নিয়মে হাজার প্রতি মৌসুমের শুরুতে ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা। তা পরে ৮০০ থেকে ১৭০০ টাকায় নামবে। স্থানীয় নিয়মে হিসাব করা হয় ১২শ লিচুতে ১ হাজার লিচু ।
লিচুর পাইকারি বাজার কালীপুর স্কুলের পাশে পাইকারি লিচু ক্রেতা ঢাকার লিচু ব্যবসায়ী আবুল কালাম, নবী উদ্দিন, চন্দনাইশের আলা উদ্দিন প্রকাশ আলী সওদাগর এবং রামুর সেলিম উদ্দিন জানান, এবার লিচুর দাম খুব চড়া। আমাদেরকে হাজার প্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত বছর এসময় ১৬-১৭শ টাকায় কিনেছি। তবে লিচুতে পোকা আক্রমণ না করায় বেশি দামে লিচু কিনেও ভালো লাগছে। তবে তারা কিছু কিছু লিচু হাজার প্রতি ১৬-১৭শ টাকায়ও কিনছে বলে দাবি করেন। তবে এগুলো জাতে ভাল নয় এবং আকারে ছোট।