নিজস্ব প্রতিবেদক »
এক যুগ আগে বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে ৮ আসামির প্রত্যেককে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভুঁঞা বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
আসামিদের অবহেলার কারণে প্রাণহানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩০৪ (২) ধারায় ৫ বছরের সশ্রম, তিন লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাস সাজা দিয়েছে আদালত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, পাশাপাশি ৩৩৮ ধারায় প্রত্যেক আসামিকে ২ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। দুই সাজা একটির পর একটি কার্যকর হবে। ফলে আসামিদের সাত বছর করে কারাভোগ করতে হবে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দণ্ডিত আট আসামি। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
দণ্ডিতরা সবাই ঠিকাদার কোম্পানি মীর আক্তার অ্যান্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমস (জেভি) ওই সময়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
মামলায় দণ্ডিত আট আসামিরা হলেন মীর আক্তার অ্যান্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমস (জেভি) বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. গিয়াস উদ্দীন, সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. মনজুরুল ইসলাম, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই, মো. মোশরাফ হোসেন রিয়াজ, ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী, আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে নির্মাণাধীন বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ভেঙে পড়লে তাতে চাপা পড়ে ১৩ জনের প্রাণ যায়।
পরে ওই বছরের ২৬ নভেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানার ওই সময়ের এসআই আবুল কালাম আজাদ ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওই মামলায় প্রকল্পটির পরিচালক সিডিএ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী তানজিব হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়।
এছাড়া ঠিকাদারি কোম্পানি মীর আখতার অ্যান্ড পারিসা ট্রেড সিস্টেমসের ১০ জন এবং বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ১২ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছিল।
কিন্তু ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর এজাহার বর্হিভূত একজনসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম শহীদুল ইসলাম।
আর এজাহারভুক্ত সিডিএ এর তিন কর্মকর্তা, ঠিকাদারি কোম্পনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিনজন এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মতিনসহ ১২ জনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ১৮ জুন আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মজিবুর রহমান।
বিচার শুরুর ১০ বছর পরে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় চলতি বছর জানুয়ারিতে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৫ জুন এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসে।
২০১০ সালে এম এ মান্নান (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার) ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়ার র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।