একটি পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, অভিনব কায়দায় নগরের চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ এলাকার কাছাকাছিতে অবস্থিত দুইশ’ বছরেরও বেশি পুরনো ঐতিহ্যবাহী বলুয়ার দীঘি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। অবশ্য বহু অংশ ইতোমধ্যে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও রাতের আঁধারে ময়লা ফেলে ফেলে ভরাট করে ফেলার কার্যক্রম চলছে। এই দীঘি ভরাটের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ নানা ধরনের প্রতিবাদ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে দখলবিরোধী অভিযান পরিচালনার আশ্বাসের পরেও কার্যতঃ দীঘিটিকে রক্ষা করার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
শত বছর ধরে এলাকার মানুষ বলুয়ার দীঘির পানি ব্যবহার করে আসছিল। এই দীঘির দক্ষিণ পাড়ে কোরবানিগঞ্জ জামে মসজিদ। মুসল্লিরা একসময় এই দীঘিতে অজু করে নামাজ আদায় করতেন। এখন দীঘির পানি কুলি করারও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছরে দীঘিটি ভরাটের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। দীঘির পূর্ব–পশ্চিম থেকে উত্তর–দক্ষিণ পাড় ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে ভবন, ঘরবাড়ি। রাতের আঁধারে ময়লা ফেলে দীঘি ভরাটের অভিনব এক পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রায় প্রতিরাতেই দীঘিতে ময়লা ফেলা হচ্ছে।
একটি বেসরকারি তথ্যসূত্রে জানা যায় শুধু চট্টগ্রাম শহরেই এমন পুকর দীঘির সংখ্যা ছিল চার হাজারেরও অধিক। এখন এই শহরে পুকুর দীঘির সংখ্যা ৪০টিও হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। স্বাধীনতার পরে বিশেষ করে গত শতাব্দির আশির দশক থেকে মানুষ ক্রমেই শহরমুখী হতে থাকে। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েসের লোভে দলে দলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড় জমিয়েছে। এই চট্টগ্রাম শহরেই মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে জনসংখ্যা অর্ধকোটি ছাড়িয়ে গেছে। এত বিপুল সংখ্যক লোকের আবাসন চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে জায়গা-জমির দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে আর সে লোভে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে হাজার হাজার পুকুর জলাশয়, দীঘি। রাতারাতি পুকুর-জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, মার্কেট ও কল-কারখানা। আর বর্তমানে আবাসন ব্যবসার লোভনীয় প্রস্তাবে পুকুর ভরাট করে প্লট তৈরি অনেক লাভজনক হওয়ায় যে পথেই ধাবিত হয়েছে অনেকে।
এভাবে পুকুর-জলাশয় ভরাট করে পুরো শহর ইট সিমেন্টের জঞ্জালে পরিণত করায় কমে গেছে পানির উৎস, কমে গেছে বর্ষায় পানি ধারণের ক্ষমতা। ফলে একটু বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে শহর অন্যদিকে একটু রোদেই অসহনীয় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিবেশ। প্রায় পুরো শহর ইট-কংক্রিটের জঞ্জাল করতে গিয়ে কোথাও খালি জায়গা না রাখায় বৃষ্টি বা বর্ষা মৌসুমে মাটি পানি শোষণ করতে পারে না।
এমন অপতৎপরতা অব্যাহত থাকলে, বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধারে অভিযান না চালালে অচিরেই বলুয়ার দীঘিও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই প্রশাসনের উচিত দখলদারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ খতিয়ান অনুযায়ী দীঘিটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা।