সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের সমস্ত মনোযোগ এখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে হলেও বর্ষা মৌসুমের প্রারম্ভেই বৃষ্টি শুরু হতে দেখে নগরবাসীর মনে জলাবদ্ধতা নিয়ে আগাম ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা না হওয়ায় অনেকে পূর্ণ বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন।
জুনেই শেষ হচ্ছে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের মেয়াদ। অথচ প্রকল্পটির সিংহভাগ কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের আওতায় শহরের পানি অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি খালে এখনো খনন বা পরিষ্কার কার্যক্রম চলছে, যা শেষ হতে কয়েক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগবে। এছাড়া আটটি খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। বাকি আছে ড্রেন সম্প্রসারণের কাজও। এই অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও চলতি বর্ষায় এর সুফল নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। ফলে এবারও ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতায় ভুগতে পারেন নগরবাসী।
অবশ্য বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলছেন, প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে তাতে এবার জলাবদ্ধতা আগের মতো হবে না। এছাড়া ভারী বৃষ্টি হলে কোথাও পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দ্রুত অপসারণে পৃথক চারটি ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। গতবার এরকম টিম ছিল দুটি। হুইল স্কেভেটর ও ড্রাম ট্রাকসহ অন্যান্য সমাগ্রী নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন টিমের সদস্যরা।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ গৃহীত ৫ হাজার ৬শ ১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক চলমান মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। অথচ এর বিপরীতে শেষ হচ্ছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে প্রকল্পের আওতায় শহরের বাইশটি এলাকাকে চিহ্নিত করে গত বছর বর্ষার পরপর খাল খনন ও পরিষ্কার, ড্রেন সমপ্রসারণ ও পরিষ্কার এবং রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেগুলো এখনো শেষ হয়নি।
প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি খালে এখনো পরিষ্কার কার্যক্রম শেষ হয়নি। এগুলো হচ্ছে বাকলিয়া খাল, রাজাখালী খাল-১, মীর্জা খাল, চশমা খাল, ডোমখালী খাল, মির্জা খাল ও হিজরা খাল। এছাড়া পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান আছে শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাক্তাই খালে। অবশ্য বেশ কয়েকবার খালটির বিভিন্ন অংশে পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু ময়লা পরিষ্কারের পর ক’দিন না যেতেই আবারো ভরাট হয়ে যায় খালটি। এজন্য নগরবাসীর অসচেতনতা, বিশেষ করে খালপাড়ের বাসিন্দাদের দায়ী করা হচ্ছে। কারণ, খালটিতে জমে যাওয়া ময়লা-আবর্জনার বেশিরভাগই গৃহস্থলি বর্জ্য।
তবে সুপ্রভাত বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে চকবাজার এলাকায় খালের পাড়ে তুলে রাখা আবর্জনা দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয়েছে। সময়মতো অপসারণ না করায় বৃষ্টিতে আবর্জনাগুলো আবার খালেই পতিত হচ্ছে। সে সঙ্গে পরিবেশ দূষণের ঘটনা তো আছেই।
সিডিএর প্রকল্প পরিচালক আহমেদ মঈনুদ্দিন বলেন, ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করছি, মেয়াদ বাড়বে। করোনা পরিস্থিতির জন্য প্ল্যানিং কমিশনের সভা একটু বিলম্ব হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ আজ বড় অসহায় অবস্থায় আছে। কর্মহীন, আয়-উপার্জনহীন অবস্থায় আছে লাখ লাখ মানুষ। বর্ষা মৌসুমটি যেন অসহায় মানুষগুলোকে আরেকটি বিড়ম্বনায় না ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কর্তৃপক্ষকে।