এন এ জাকির, বান্দরবান »
টানা ৪দিনের বর্ষণে সাঙ্গু ও মাতা মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বান্দরবানে দেখা দিয়েছে বন্যা। বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বিভিন্ন সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় রয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও।
জানা গেছে ৪ দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের লামা আলীকদম নাইক্ষ্যংছড়ি রুমা থানচিসহ জেলা শহরের বাস স্টেশন, মধ্যম পাড়া, উজানী পাড়া, বালাঘাটা স্বর্ণমন্দির এলাকা, ইসলামপুর, কাসেম পাড়া, বনানী সমিল, আার্মি পাড়া, ওয়াপদা ব্রীজ, হাফেজ ঘোনাসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এরফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ। আর্মি পাড়ার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টির কারেণে গতকাল রাতে আমাদের বাসায় পানি উঠে গেছে। ঘরের জিনিসপত্র সব ভিজে গেছে। কোনো কিছু বের করতে পারিনি। পরিবারের লোকজন নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। তবে বন্যায় প্লাবিত হয়ে অনেকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। শহর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া রহিমা খাতুন বলেন, বাসার চাল পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোনমতে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। তবে কোনো জিনিসপত্র আনতে পারিনি। সবকিছু মিলিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় আছি। একিই কেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন সকাল থেকে পানি বেড়ে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে এসে উঠেছি কিন্তু এখানে এখনও কেউ খবর নেয়নি। কোন সাহায্যও দেয়নি। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিতদের জন্য জেলায় ১৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তারমধ্যে ২ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে বন্যাদুর্গতদের তালিকা করা হচ্ছে খাবার বিতরণের জন্য।
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবী বলেন প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষকে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুরে ও রাতে তাদেরকে খাবার দেয়া হবে। পাহাড়ের পাদদেশে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদের সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে এরপরও যারা সরবে না তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়া হবে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন সড়কে পানি উঠায় বান্দরবানের সাথে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও লামা ও আলীকদমের বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে লামা ও চকরিয়ার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বান্দরবান জেলাপ্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি বলেন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলার ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দেয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।