সরকারি-বেসরকারি উভয় পক্ষই খুব উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে গাছ কাটে। গাছ কাটার মধ্যে তারা এক অনির্বচনীয় আনন্দ লাভ করে। এবার দুঃখজনক খবর হলো, খোদ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর বিরুদ্ধেই উঠেছে গাছ কাটার অভিযোগ। পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) আগর গবেষণাগারের ভবন নির্মাণের জন্য কাটা হয়েছে ছোট-বড় অন্তত ৯৭টি গাছ। এক সপ্তাহ ধরে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
বিএফআরআই আগর গবেষণাগার করার জন্য ছয়তলার ভবন নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের বিএফআরআইয়ের অভ্যন্তরে ৫৮ শতক জায়গায়। গবেষণাগার নির্মাণের জন্য ‘সম্পূর্ণ বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রকল্প’ নেওয়া হয়। বন বিভাগের দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি বিএফআরআই ও অপরটি বন অধিদপ্তর।
২০২১ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) পৌনে ৭৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। এরপর নকশা দিয়েছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। অনুমোদন রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের।
প্রকল্পটির নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করতে সময় লেগেছে আরও এক বছরের বেশি। এরপর বিএফআরআইয়ের সাবেক পরিচালক রফিকুল হায়দার প্রকল্পের জায়গা বুঝিয়ে দিতে দেরি করেন। তাঁর আপত্তির মূল কারণ প্রকল্প এলাকার গাছগুলো। অবশেষে ২০২৩ সালের ৪ জুলাই প্রকল্পের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই বছরই স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে প্রকল্পটির নকশা পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমোদন মেলে।
২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর বিএফআরআইয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা (প্রশাসন) মো. মাহবুবুর রহমান প্রকল্পের গাছ কাটার অনুমোদনের জন্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ বরাবর আবেদন করেন। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর উত্তর বন বিভাগ ফিরতি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে গাছ কাটার অনুমোদন তারা দেয়নি। তারা কেবল গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।
প্রশ্ন হলো, অনুমোদন দেওয়া না হলেও বিএফআরআই এত উৎসাহ নিয়ে গাছ কাটছে কেন?
উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম কায়চার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গাছ কাটার কোনো অনুমোদন দিইনি। শুধু দণ্ডায়মান ৭৭টি গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। তাদের বলা হয়েছে, গাছ কাটার জন্য মন্ত্রণালয়ের যথাযথ কমিটির অনুমোদন নিয়ে তা জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিতে প্রেরণ করার জন্য। ওই কমিটির সদস্যসচিব আমি। আমরা সে রকম কিছু পাইনি।’
এখন গাছগুলো কাটা হয়ে গেছে। এর জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কি বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাবে!