দেশে বন্য প্রাণীর সুরক্ষার জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন করা হয়। আইনের সংশোধিত তফসিলে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ ইত্যাদিকে রক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আগের তফসিল সংশোধন করে মোট ৫২ প্রজাতির হাঙর ও রে মাছকে সুরক্ষার তালিকায় আনা হয়।
তবে দুঃখজনক হলো এসব ‘সুরক্ষা’ শুধু কাগজেই রয়ে যায়। বাস্তবে হাঙর কিংবা রে রক্ষায় তেমন তোড়জোড় নেই। একটি পত্রিকার তথ্যমতে, গত এক দশকে চট্টগ্রাম বন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মোট পাঁচটি হাঙরের চালান রপ্তানির তথ্য পাওয়া গেছে। এসব চালানে ২ হাজার ৩৬৭ কেজি হাঙরের চামড়া, পাখনা ও দাঁত রপ্তানি হয়েছে।
বন্য প্রাণিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) ও জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের (জেডএসএল) এক যৌথ পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে ৭০ শতাংশ বন্য প্রাণী কমেছে। বনভূমি উজাড়, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এমনটি ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ১ হাজার ৬০০টির বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যার মধ্যে ৩৯০টি প্রজাতিই বিলুপ্তির মুখে রয়েছে। এই প্রজাতিগুলোকে আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী।
একসময় বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ধরা হতো। তবে বর্তমানে ধরা হয় সোর্স, ট্রানজিট ও কনজ্যুমার দেশ হিসেবে। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়ার পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে পাচার হওয়া বন্য প্রাণীও আসে দেশে। মূলত তিন পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধরা বন্য প্রাণী ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।
কয়েক বছর আগে তক্ষক নিয়ে মিথ্যা প্রচারণায় প্রাণীটিও প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। আসলে আইনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগও নিতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে পৃথিবীটা শুধু মানুষের নয়। এই গ্রহ সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের। মানুষ ভালো থাকতে চাইলে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে হবে।