বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে সতর্ক হওয়া জরুরি

কয়েকদিনের টানা বর্ষণে রাঙ্গুনীয়ার গুমাইবিলের আড়াই হাজার হেক্টর জমির রোপা আমনের চারা তৃতীয়বারের মতো পানিতে ডুবলো। গুমাই বিল ছাড়াও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়াবিল, রইস্যাবিল, তইলাভাঙাবিল ও তালুকদারবিলসহ কমপক্ষে ১৫টি বিল ডুবে গেছে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। গুমাই বিলে চাষাকরা সাড়ে ৩ হাজার কৃষকের এখন চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে। ২০১৫ সালেও অতি বৃষ্টির কারণে রোপা আমনের চারা প্রায় ১০ দিন পানির নিচে থাকায় পচে গিয়ে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। এবারও সেই আশঙ্কায় গুমাই বিলের প্রায় তিন হাজার কৃষকের চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে।
গুমাইবিল বিখ্যাত হয়ে আছে ধান বা খাদ্য উৎপাদনের জন্য। বলা হয়ে থাকে, দেশের সব মানুষের অন্তত তিনদিনের খাদ্যের জোগান দেয় এই গুমাইবিল। ফলে এই বিলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হলে তা দেশের মোট খাদ্য উৎপাদনে বড় একটি শূন্যতা তৈরি করবে। কাজেই সরকার বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থেকে আবার উৎপাদনে উৎসাহ ও সাহস জোগাতে। বাংলাদেশ যে খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে তা ধরে রাখতে হলে চাষযোগ্য কোনো জমি ফেলে রাখা যাবে না।
অন্যদিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরি নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকদের রোপিত ধান ও বিভিন্ন ফসলি ক্ষেত। বন্যায় উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
হয়ে পড়েছে। খাবার ও গাবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার লোকজন।
শনিবার থেকে শুরু হয়েছে টানা বর্ষণ। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকদের রোপা ধান ও সবজি ক্ষেত। এদিকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধ্বসের আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত অন্তত ২ হাজারেরও অধিক বসতি ঝুঁকিতে রয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চিরিঙ্গা-মানিকপুর সড়কের পাহাড়তলী এলাকায় চলাচলের সড়ক ধ্বসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সন্ধ্যা ৬টা) পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়তার কারণে আরো ২-৩ দিন বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি পাহাড়ধসের আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের আগাম প্রস্তুতি দরকার। বন্যার্তদের সাহায্যের পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বাস করা মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।