স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও মীরসরাইয়ে পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। খবরে প্রকাশ হাটহাজারিসহ যেসব এলাকায় এখনও পানি বেশি রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রেই অবস্থান করছেন। এসব এলাকায় পানি নামতে শুরু করলেও খাবারের পাশাপাশি তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। সে সঙ্গে, গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু-পাখিরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে, গত কয়েকদিনের বন্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূ্র্বাঞ্চলের অন্তত ১১টি জেলা কবলিত হয়েছে, যাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম জেলার মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে বন্যায় এখন পর্যন্ত মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘরবাড়ি, পোল্ট্রি ফার্ম, মাছের খামার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে, অনেকের বাড়িঘরের নিশানা পর্যন্ত নেই। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছে হাজার হাজার পরিবার। বন্যার খবর পেয়ে অনেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু বন্যা-পরবর্তী এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্থায়ী পুনর্বাসন না করলে তারা এই ক্ষতি পোষাতে পারবে বলে মনে করেন না ক্ষতিগ্রস্তরা।
সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দুর্গত এলাকার ক্ষয়-ক্ষতি পূরণের পাশাপাশি রোগ-ব্যাধি মোকাবেলা করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
এবারও সেটির ব্যতিক্রম হবে না। তবে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এমন একটি সময়ে যখন বাংলাদেশে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার। এ অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। কাজেই বন্যার পরে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে আসে এবং সেটি কীভাবে মোকাবেলা করতে হয়, সেসব আমরা জানি। অতীত অভিজ্ঞতার সঙ্গে এবারের ফিল্ডের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে আমরা বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যাবতীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দেয়। বন্যায় সরাসরি ক্ষতির চেয়ে এই ক্ষতি কম নয়। তবে জানা গেছে, ডায়েরিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত রোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যেই প্রায় আটশো মেডিকেল টিম দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করেছে সরকার।
এছাড়া বন্যার কারণে শিক্ষার্থীদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। অনেকের বইপত্র, খাতা-কলম ভেসে যায় বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বছরের এসময়ে এসে তা জোগার করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে অনেকের জন্য। সরকার এবং ত্রাণদাতাদের এদিকেও নজর দেওয়া আবশ্যক বলে মনে করি।