চকরিয়ায় খাবার সংকটে মানুষ
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া >>
টানা ভারী বর্ষণ আর মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চকরিয়ায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত পাঁচদিন ধরে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা জনপদে ৬ লাখের মধ্যে প্রায় চার লাখ মানুষ ছিল পানিবন্দি। অবশ্য শনিবার থেকে নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় নেমে যেতে থাকে বানের পানি। তবে লোকালয় থেকে পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ।
এরই মধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র, রাস্তার পাশে আশ্রয় নেওয়া লোকজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কগুলো যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নলকূপগুলো কয়েকদির ধরে পানিতে ডুবে থাকায় পানি উঠছে না। এতে চরম বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে পড়েছে বন্যা কবলিত মানুষ।
বন্যার পানি সরে যাওয়ায় এখন ভেসে উঠছে সড়কের ক্ষত চিহ্ন। পানির স্রোতের চাপে বন্যায় উপজেলা এলজিইডি বিভাগের ৩০ কিলোমিটার, সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের ২০ কিলোমিটার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর (পিআইও) বিভাগের অধীন ১৮টি ইউনিয়নে প্রায় একশ কিলোমিটার সড়ক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
বন্যার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৬০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সবমিলিয়ে বন্যার তাণ্ডবে উপজেলাজুড়ে সড়ক ও বেড়িবাঁধের প্রায় শতকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বন্যার তাণ্ডবে উপজেলার ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে অবস্থিত ২৫২টি চিংড়িঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে ১৯ কোটি ১২ লাখ টাকার ৩৮২ মেট্রিক টন চিংড়ি ভেসে গেছে। পাশাপাশি ভারী বর্ষণে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৭১২ হেক্টর আউশ, ৩৮০ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৬৪৮ হেক্টর রোপা আমন ও ২৫৫ হেক্টর সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা মেলে বন্যা কবলিত লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ দেয়া হয়েছেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী ইউনিয়ন জানান, মানুষ খুব কষ্টে আছেন। সরকারিভাবে ও বেসরকারি উদ্যোগে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া উপজেলার বদরখালী শাখা কর্মকর্তা (এসও) মো.জামাল মোর্শেদ বলেন, বন্যার তাণ্ডবে মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া উপজেলা অংশের ৫ স্থানে ১১০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙা স্থান দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকছে।
কক্সবাজার পাউবোর চিরিঙ্গা শাখা (এসও) কর্মকর্তা শাহ আরমান সালমান বলেন, পাহাড়ি ঢলের তাণ্ডবে বেশি ঝুঁিকতে আছে পৌরশহর বাঁধের দিগরপানখালী অংশ। ওই এলাকার অন্তত ৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল বলেন, ভারী বর্ষণ আর পাহড়ি ঢলে উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ৭১২ হেক্টর আউশ, ৩৮০ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৬৪৮ হেক্টর রোপা আমন ও ২৫৫ হেক্টর সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, উপজেলায় ব্যাপকক্ষতি হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে হিসাব করেই জানা যাবে ক্ষতির পরিমাণ। ঘর হারানো পরিবার ও ভেঙে যাওয়া সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ সচল করা অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
তিনি বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ৪ টন চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। আরো ২৮ টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে অপরদিকে, বন্যায় দুর্গত মানুষের চিকিৎসা সহায়তায় উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে থেকেও বিশেষ ব্যবস্থায় দুর্গতদের দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।