সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে সরবারহ চেইনে বিঘ্ন ঘটায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। সেই প্রভাব এখনো বাজারে রয়ে গেছে। সরকার পতনের কয়েকদিন পর সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে আবার বেড়েছে সবজিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম। ফলে দুর্ভোগ কাটছেই না ক্রেতাদের।
বাজারে কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক শ টাকার নিচে সবজি নেই বললেই চলে।
একই সঙ্গে সরবরাহ না থাকায় চট্টগ্রামের বাজারে কাঁচা মরিচেরও সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন বাজারে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে, প্রতি কেজির দাম পড়ছে এক হাজার টাকা। অন্যদিকে পাইকারি আড়তে এদিন কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়নি সরবরাহ না থাকায়। পত্রিকার সংবাদে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বাজারে অধিকাংশ সবজি আসে বগুড়া, ফরিদপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। বন্যার কারণে তিন দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রামে যান চলাচল প্রায় বন্ধ। এতে চট্টগ্রামের বাজারে কাঁচা মরিচ আসছে না। ফলে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে পণ্যটির। এ সুযোগে দাম বাড়িয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে পণ্যের মূল্য বাড়াতে কার্পণ্য করেন না কিছু ব্যবসায়ী। এতে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত কয়েক মাসে জিনিসপত্রের দাম শুধু বেড়েছে। এ ছাড়াও শিশুখাদ্যসহ মাছ-মুরগির খাদ্য ইত্যাদির মূল্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ায় প্রভাব পড়ছে উৎপাদিত পণ্যে। এটা মানতে হবে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ। উৎপাদক পর্যায়ে কৃষক যে পরিমাণ মূলধন নিয়ে উৎপাদন করে, এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করছে পরিবহন সংকটের ওপর। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না মানুষের আয়। ফলে নিম্নআয়সম্পন্ন মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে উঠছে। স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী এবং পরিবার ছেড়ে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের জীবনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
অনেকদিন ধরে বাজার অস্থির হয়ে আছে। যার যেমন ইচ্ছে তেমন করে দাম বাড়ায় পণ্যের। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারায় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয় না। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কোনো পণ্য বিক্রি হয় না। এ বিষয়ে বর্তমান সরকার কঠোর হবে বলে জনগণ প্রত্যাশা করে।
তবে মানতে হবে বন্যা পরিস্থিতিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবহন সংকটও চলছে। এরফলে বাজারে পরিস্থিতির প্রভাব পড়বে। কিন্তু তাই বলে যার যেমন ইচ্ছা তেমন দাম বাড়াবে তা হয় না। সাধারণ মানুষের কষ্টের ব্যাপারটিও ব্যবসায়ীদের মাথায় রাখতে হবে।