বন্যায় ক্ষতি বেশি নোয়াখালীতে আর ত্রাণ বেশি পেয়েছে ফেনী

অগাস্টের বন্যায় ১১ জেলায় ক্ষতি ১৪,৪২১ কোটি টাকা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় অগাস্টের বন্যায় আনুমানিক ১৪ হাজার ৪২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বেসরকারি এ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, ক্ষতির ওই অংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের খসড়া জিডিপির শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অনুমিত জিডিপির শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ।

রোববার (৬ অক্টোবর ) রাজধানীর সিপিডি কার্যালয়ে ‘পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া: সিপিডির বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে এ তথ্য জানিয়েছে সিপিডি।

সংবাদ সম্মেলনে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুল ধরে বলা হয়, দুর্গত জেলাগুলোর ৪৬ লাখ মানুষ এ দুর্যোগে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

প্রবল বৃষ্টি আর উজানের ঢলে অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া নজিরবিহীন বন্যার কবলে পড়ে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও বনায়ন খাতে। আপাত হিসাবে তার পরিমাণ ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে অবকাঠামো খাত, যা সার্বিক ক্ষতির ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ।

এছাড়া আবাসন বা ঘর-বাড়ির ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ৪০৭ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

মোট ক্ষতির মধ্যে ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ সড়কের, ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ শস্যের, ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ আবাসনের, ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ মৎস্যের এবং ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য খাতে।

বন্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে নোয়াখালী জেলায়। সেখানে ক্ষতির অঙ্ক ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ২৯ শতাংশ।

এছাড়া কুম্ল্লিা জেলায় ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা, ফেনিতে দুই হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, চট্টগ্রামে এক হাজার ৬৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, লক্ষ্মীপুরে এক হাজার ৪০৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, মৌলভীবাজারে ৫০৬ কোটি টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪ কোটি টাকা, হবিগঞ্জে ১৪৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, খাগড়াছড়িতে ১২৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, কক্সবাজারে ১০০ কোটি টাকা এবং সিলেট জেলার ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব করেছে সিপিডি।

এ গবেষণা সংস্থা বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে মাথাপিছু সরকারি সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৬২ টাকা দশ পয়সা, নোয়াখালীতে ৯২ টাকা ১০ পয়সা, কুমিল্লার মানুষ ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সা ও সিলেটে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।

সরকারি অর্থ বণ্টণে এমন ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিডি বলেছে, হয় এটা বণ্টনে সমস্যা, নয়ত তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিতে বড় ধরনের ত্রুটি আছে।

সিপিডির গবেষক মুনতাসির কামাল বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে মাথাপিছু সাহায্যের ওই হিসাব তারা করেছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ত্রাণ হিসেবে চাল, খাবার, শিশুখাদ্য, পশু খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার তথ্য দিয়েছে। এই চারটি বিষয় নিয়েই প্রতিবেদনটি করেছে সিপিডি।

সংস্থাটি বলছে, বন্যায় নোয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি ত্রাণ গেছে ফেনী জেলায়, যার আর্থিক পরিমাণ ১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ফেনীতে বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ, আর নোয়াখালীতে ১৬ লাখ চার হাজার ৩০০ জন। নোয়াখালীতে ত্রাণ গেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার, যা জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

কুমিল্লায় ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এ জেলা ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিন জেলার মধ্যে ফেনীতে মাথাপিছু সহায়তার পরিমাণ ১৬৫ টাকা ৮০ পয়সা, কুমিল্লায় ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সা, নোয়াখালীতে ৯২ টাকা ৯০ পয়সা।

অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হবিগঞ্জে মাথাপিছু সহযোগিতার পরিমাণ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। এ জেলায় ২০ হাজার ৮৪০ জন বন্যাদুর্গত হয়েছিলেন।

আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাথাপিছু সহযোগিতার পরিমাণ এক হাজার ৮৪ টাকা, চট্টগ্রামে তিন হাজার ৯৪৭ টাকা, আর সিলেটে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে ফাহমিদা খাতুন বলেন, “নোয়াখালীতে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিজন মানুষ পেয়েছেন গড়ে প্রায় ৯৩ টাকা।

“অথচ সিলেটে বন্যা দুর্গতের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার, ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেখানে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার। প্রতিজনে গড়ে ত্রাণ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।”