বন্দরের মাসুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কি এখনই নিতে হবে

১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে দুশ্চিন্তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হলো ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের মাশুলের হার বাড়ানোর খবর।
এই খবর ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে মাশুল বাড়ানোর দুই প্রভাবের কথা বলছেন। যেমন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দিন শেষে বাড়তি মাশুল ভোক্তার পকেট থেকেই যাবে। তাতে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় রপ্তানিকারকেরা পিছিয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল আদায়ের প্রধান দুটি খাত হলো জাহাজ ও পণ্য পরিবহনের সেবাবাবদ। বন্দরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, বিদ্যমান মাশুলের হার অনুযায়ী ২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই খাতে মাশুল আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, গেজেট প্রকাশের পর বন্দরের নতুন মাশুল কার্যকর হবে। নতুন করে বর্ধিত হারে মাশুল কার্যকর হলে এ ক্ষেত্রে আয় বা আদায় কম-বেশি ৪০ শতাংশ বাড়বে। এ হিসেবে মাশুল হিসাবে বন্দরের দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি ও কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে অস্বস্তিতে আছি আমরা। এই সময়ে কনটেইনার ডিপোর মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা এল। এখন ব্যবহারকারীদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা ছাড়াই বন্দরের মাশুল বাড়ানোর পদক্ষেপ কোনো যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। রপ্তানিতে প্রতিটি সেন্ট নিয়ে দর-কষাকষি করতে হয়। ফলে এই বাড়তি মাশুল রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা পিছিয়ে দেবে।’
১৫ জুলাই বেসরকারি কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন এক সার্কুলারে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার মাশুলের হার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। সার্কুলারে সেবাভেদে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সংগঠনটি, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। বেসরকারি ডিপোর হিসাবে, ডিপোতে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার মাশুল বাড়লে বছরে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ বাড়তে পারে ব্যবহারকারীদের। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কম-বেশি বাড়তি ব্যয় হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এই বাড়তি ব্যয় করতে হবে ব্যবসায়ীদের।
সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক একটি পত্রিকায় বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং টার্মিনাল দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বিদেশি অপারেটরকে সুবিধা দিতেই হঠাৎ করে এই মাশুল বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাশুল না বাড়িয়ে গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর খাতে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলো উদ্ধার করুন। মাশুল বাড়ানোর দরকার হবে না। বন্দর এমনিতেই লাভজনক প্রতিষ্ঠান।’
আমেরিকার বাড়তি শুল্কারোপ অন্যদিকে বন্দরের মাসুল বৃদ্ধি ‘গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া’র মতে হয়ে গেল না! কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আরও বিশদ আলোচনা করা। তীব্র প্রতিযোগিতার সময়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থও দেখা উচিত। আর এই সিদ্ধান্ত যদি কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর লাভের জন্য করা হয় তাহলে তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।