বন্দরের নতুন যুগের সূচনা

ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বিদেশি অপারেটরের মাধ্যমে শুরু হলো চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) যাত্রা। সোমবার দুপুরে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ‘এমভি মায়ের্সক দাভাও’ নামের একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজের হ্যান্ডলিং কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন যুগের সূচনা হলো। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চুক্তি অনুযায়ী হিস্যা দিয়ে সৌদি আরবের রাজ পরিবারের মালিকানাধীন ‘রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশ লিমিটেড’ আগামী ২২ বছর পিসিটি পরিচালনা করবে। এই টার্মিনালটিতে বছরে প্রায় ৫ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে।
এমভি মায়ের্সক দাভাও জাহাজটি গত ৯ জুন প্রথমে বন্দরের জিসিবি-৯ নম্বর জেটিতে ভেড়ে। সেখানে আমদানি কন্টেইনার নামিয়ে ১০ জুন পিসিটিতে ভেড়ে। এখানে রপ্তানিপণ্য বোঝাই এবং খালি কন্টেইনার মিলে ১৪শ টিইইউএস কন্টেইনার জাহাজিকরণ করে জাহাজটি পোর্ট কেলাং এর উদ্দেশে যাত্রা করবে।
এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ল্যান্ডলর্ড প্রক্রিয়ায় বন্দর পরিচালিত হয় বিশ্বজুড়ে। আমরা পিসিটি দিয়ে সেই প্রক্রিয়া শুরু করে ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। এ মুহূর্ত চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়। আশাকরি, এভাবে বিদেশি বড় পার্টনারদের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। যাতে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার অনেকগুণ বেড়ে যাবে। আমাদের অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। নতুন প্রযুক্তি এখানে আসছে। আরও আসবে। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা লাভবান হবো। এখানে কাজ করে আমাদের লোকজন দক্ষ হবে।
পিসিটি টার্মিনালে মোট তিনটি কন্টেইনার জাহাজ ভেড়ার জেটি আছে, যার দৈর্ঘ্য ৫৮৪ মিটার। এছাড়া ১টি ২০৪ মিটারের তেল খালাসের ডলফিন জেটি, ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মিত হয়েছে। এই জেটিতে ২শ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। সব সরঞ্জাম সংগ্রহ করে পিসিটি পূর্ণ সক্ষমতায় যেতে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে। শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে রেড সি গেটওয়ে লিমিটেড। আর চুক্তিমতো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চার্জ পাবে।
ল্যান্ডলর্ড প্রক্রিয়ায় বন্দর পরিচালনা করে বিশ্বের নানা দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ লাভবান হয়েছে। এতে বন্দর পরিচালনার ভার না নিয়ে দক্ষ পরিচালনার মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাপনায় গতিও এসেছে সঙ্গে আয়ও বেড়েছে। দেরিতে হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর নতুন যুগে প্রবেশ করলো।