সুপ্রভাত ডেস্ক »
জ্বালানি সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চেষ্টায় কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি বদলে দিয়েছে সরকার। বুধবার থেকে সকল সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস খোলা থাকবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এতদিন সরকারি কর্মীরা অফিস করতেন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা। খবর বিডিনিউজের।
এখন থেকে ব্যাংকের কাজ চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এতদিন ব্যাংকের দাপ্তরিক কাজের সময় ছিল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সামনে সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন।
বুধবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটার দুইটা সুবিধা। একটা হল বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে, আর ট্রাফিক জ্যামটাও একটু ডিস্ট্রিবিউটেড হয়ে যাবে।’
অফিসের সূচি বদলের পাশাপাশি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সপ্তাহে দুদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকারি অফিসগুলোতে বিদ্যুত সাশ্রয়ে কোথাও কোনো পর্দা টানানো থাকবে না। লাইট যথাসম্ভব কম লাগিয়ে কাজ করতে হবে। এয়ার কুলারও যথাসম্ভব কম ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুক্র ও শনিবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত আসার পর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ দুদিন বন্ধ রাখার পৃথক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে; যা আগামী সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হবে। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার করার নির্দেশনা দিয়েছে।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও এ দুদিন বন্ধ থাকবে বলে পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস ক্লাসের পরিবর্তে পূর্ণদিবস ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমানে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে ছয় দিনই ক্লাস হচ্ছে। তবে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনিবারও ছুটি দিচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করার সিদ্ধান্ত আগেই জানানো হয়েছে। জ্বালানি সংকটের মধ্যে আগেভাগেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও।
ব্যাংকে লেনদেন ৩টা পর্যন্ত, পুঁজিবাজারের সিদ্ধান্ত আজ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি ঘোষণার সঙ্গে অফিসের সময়সূচি মেলাতে ব্যাংকের লেনদেন এক ঘণ্টা এগিয়ে এনে ৯টায় শুরু হবে; যা চলবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
অপরদিকে ব্যাংকের সময়ের সঙ্গে মিল রেখে পুঁজিবাজারে লেনদেনের নতুন সময় নির্ধারণ করা হবে মঙ্গলবার বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
লেনদেন পরবর্তী ব্যাংকের দাপ্তরিক প্রয়োজন শেষ করতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। এ সময়ের মধ্যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিস ত্যাগ করার বাধ্যবাধকতা দিয়ে নির্দেশনাটি জারি করে কেন্ত্রীয় ব্যাংক।
নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সমুদ্র/স্থল/বিমানবন্দর এলাকায় (পোর্ট ও কাস্টমস) অবস্থিত ব্যাংকের শাখা, উপশাখা সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়টি অপরিবর্তিত থাকবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সম্প্রতি দেশজুড়ে লোড শেডিং ফিরে এসেছে। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বাড়ানো হয়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
এই পরিস্থিতি লকডাউনের সময়ের মত হোম অফিস চালু করা, অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, জ্বালানির দাম বাড়ায় ভর্তুকির যে চাপ তৈরি হয়েছে, তাতে ‘একমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমেই’ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করা সম্ভব বলে তারা মনে করছেন।
ওই বৈঠক থেকেই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রাখা, আলোকসজ্জা না করা, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করা, বাজার, মসজিদ, শপিংমলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনা, যে কোনো রাতের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করার সুপারিশ করা হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ওই সুপারিশক করার দেড় মাস পর অপিস ও ব্যাংকের কাজের সূচি বদলের সরকারি ঘোষণা এল।