জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যান। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল চার মাসে এ পর্যন্ত ৬৭ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। বাংলাদেশে দিন দিন বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বাড়ছে। বিশেষ করে, হাওড় অঞ্চলখ্যাত সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় এই হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৫ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ ঘোষণা করা হলেও প্রচার প্রচারণায় তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ হাওড়বাসীর।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. ইফতি খায়রুল আমিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আয়নিস্ট পার্টিকুলার পরিমাণ বর্তমানে অনেক বেড়ে গেছে। এতে বজ্রপাতের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। তিনি আরও বলেন, বজ্রপাত যেহেতু হাইভোল্টেজের ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহ, আকৃষ্ট করার জন্য কোনো পাথ যদি দেয়া হয়, তাহলে মানুষ কিংবা বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষা পাবে।
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আহমদে বলেন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর , যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেক্সাস ও ফ্লোরিডায়ও অনেক বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। অষ্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও বজ্রপাতের হার অনেক বেশি। কিন্তু সেখানে তাদের ব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষয়-ক্ষতি অনেক কম। এর কারণ হলো, ওরা আগেই পূর্বভাস দিতে পারে। ওই এলাকাগুলো আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ নয়। আর লাইটনিং অ্যারেস্টার অনেক বেশি। তাদের সচেতনতামূলক কর্মসূচিও অনেক এগিয়ে। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা নেই। তিনি বলেন, আমাদের এখানে শহরের চেয়ে গ্রামে ক্ষয়-ক্ষতি অনেক বেশি। কারণ, শহরে উঁচু ভবন আছে। আর ভবনগুলোতে প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। কিন্তু গ্রামে ফাঁকা জায়গা, খোলা মাঠ, ফসলের মাঠ অনেক বেশি।
বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। আরেও বেশি ‘থান্ডার অ্যারেস্টার’ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছে তারা। তবে তা কি সময়মতো ঠিক জায়গায় স্থাপন করা হচ্ছে? এ বিষয়ে গবেষক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নাঈম ওয়ারা বলেন, বজ্রপাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তালগাছ লাগানো হয়েছিল। কিন্তু তা লাগানো হয়েছিল রাস্তার দুই পাশে। মাঠের মধ্যে লাগানো হয়নি। তাই সেটা তেমন কাজে আসেনি। আর রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়নি। লাইটনিং অ্যারেস্টার যা বসানো হয়েছে, তা-ও অপরিকল্পিত। লাগানে হয়েছে জেলা প্রশাসকের অফিস ভবনের ওপরে। সেখানে আবার ওয়্যারলেস টাওয়ার আছে৷ সেটা অ্যারেস্টারের চেয়ে উঁচু৷ তাহলেও ওটা কী কাজে আসবে? ওখানে তো অ্যারেস্টার প্রয়োজন নাই। আবার মাঠে যা দেয়া হয়েছে, তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
বজ্রপাত উচু জায়গায় আঘাত করে নিস্ক্রিয় হয়। মাঠে বা খোলা জায়গায় গাছপালা না থাকায় কৃষক, গবাদি পশু, পথচারিদের আঘাত করে। এ বিপর্যয় থেকে রক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বছরে আরও অসংখ্য প্রাণ বেঘোরে যাবে।