বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে হবে

এক সময় বঙ্গোপসাগর থেকে কোনো ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে উঠে আসা মানেই ছিল হাজারো মানুষের মৃত্যু; সে পরিস্থিতি এখন বদলেছে। কিন্তু বদলে যাওয়া জলবায়ু নদী বিধৌত এই বদ্বীপে হাজির করছে নতুন বিপদ।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ারের ৯ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কমে এসেছে। কিন্তু অতি উষ্ণতা ও বজ্রপাতের মতো নতুন ধরনের দুর্যোগে মৃত্যু ও বিপদ বাড়ছে। বাংলাদেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ সারা বছর এ ধরনের কোনো না কোনো জলবায়ু দুর্যোগের শিকার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু বেড়ে গেছে। প্রতিবছর তিন শতাধিক মানুষ বজ্রপাতে মারা যায়। নতুন এ দুর্যোগ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
গত এক দশকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও জরুরি ভিত্তিতে জান-মাল রক্ষার ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হয়েছে অনেক। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমলেও বজ্রপাত ও বন্যার মত দুর্যোগ শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
দুর্যোগ হিসেবে বজ্রপাতে মৃত্যু হঠাৎ বেড়ে গেছে। কৃষি কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে বেশি। নৌকায় থাকা অবস্থায় বা মাছ ধরতে গিয়েও বজ্রপাতে কম লোক মারা যাচ্ছে না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, দেশের বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র (লাইটেনিং অ্যারেস্টার) এবং আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় বজ্রপাত শুরুর আধা ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় লোকজন ওই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে।
আর্থ নেটওয়ার্ক সিস্টেম। কোন এলাকায় বাজ পড়বে, তা প্রায় একঘণ্টা আগে জানিয়ে দেয় এই প্রযুক্তি। মেঘের অবস্থান, আকৃতি, বাতাসের গতিবিধির মতো অনেকগুলি প্যারামিটার খতিয়ে দেখে বিশ্লেষণ করা হয় কোন এলাকায় সম্ভাব্য বজ্রপাত হতে পারে। কন্ট্রোল রুম ওই বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বা কংক্রিটের ছাদের তলায় আশ্রয় নিতে বলা হয়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপেল ফোনের জন্য উপযোগী অ্যাপের মাধ্যমেও আগাম সতর্কবার্তা দেয়া যায়। আবার কেউ যদি মোবাইলের মেসেজ না পড়েন বা অ্যাপের অ্যালার্ট না দেখেন, সে আশঙ্কা থেকে সাইরেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উঁচু গাছ বজ্রপাত আকৃষ্ট করে সাধারণ মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। তাল, সুপারি, খেজুর বা নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছ যাতে কেটে ফেলা না হয়, সেদিকে প্রচারণা চালানোসহ কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সব মিলিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হলে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু কমতে পারে।