সুপ্রভাত ডেস্ক »
ঢাকার বঙ্গবাজারে অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য তহবিল সংগ্রহে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকের ওই সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরের (০২০০০৯৪০৬৬০৩১) মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে যে কেউ অর্থ সাহায্য পাঠাতে পারবেন বলে ব্যবসায়ীরা নেতারা জানিয়েছেন। শনিবার সকালে বঙ্গবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। খবর বিডিনিউজ।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তালিকা তৈরি আর ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে আমরা তাদের বুঝিয়ে দেব। তারাই টাকা বণ্টন করবেন।’ বৃহস্পতিবার বঙ্গবাজার পরিদর্শন করে দোকান মালিক সমিতির সভাপতিকে মার্কেটের নামে একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট করার পরামর্শ দিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান। সেসময় তিনি বলেন, ‘অনেক পাবলিক আমাকে ফোন করেছেন যে তারা হেল্প করতে চান, কিন্তু কোথায় টাকা দেবেন। আমি তখন দোকান মালিক সমিতির সভাপতিকে বলেছি, উনারা এই মার্কেটের নামে যৌথ একটা অ্যাকাউন্ট করুক। ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর আমরা প্রকাশ করে দেব। তারপর নগদ-বিকাশ সবকিছু করে ওদের মাধ্যমে টাকাটাৃএকদিকে টাকাটা কালেক্ট করা, আরেকদিকে কাকে টাকা দেওয়া হবে সেটাও নির্ধারণ করা, এভাবে আমরা এগোতে চাই।’
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী তার তহবিল থেকে টাকা দিতে চান বলেও জানান তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ‘প্রধানমন্ত্রী তার তহবিল থেকেও এখানে টাকা দেবেন। ব্যবসায়ীদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকাটা হয়ে গেলে আমরা টাকাটা দেব।’ ব্যবসায়ীদের সাহায্য করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তালিকাটা হয়ে গেলে কাকে আমরা টাকা দেব, ক্ষতি অনুযায়ী আমরা কাকে কত সাহায্য করতে পারি, সেই সিদ্ধান্ত হবে।’
পোড়া টিন ও লোহা থেকে ৪০ লাখ টাকা
বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া মালামাল বিশেষ করে টিন ও লোহাগুলো প্রায় ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। ওই টাকাও নতুন ব্যাংক একাউন্টে চলে যাবে বলে জানান তিনি।
অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসতে পারেননি ব্যবসায়ীরা
অগ্নিকা-ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঈদের আগে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে শনিবার বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে বসার কথা বলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঘটনাস্থল পুরোপুরি পরিষ্কার না হওয়ায় সেটি হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী ভিত্তিতে দোকান তোলার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মেয়র ও আমি একমত যে যত দ্রুত সম্ভব আমরা এটা (ধ্বংসস্তূপ) পরিষ্কার করব। ডিজি ফায়ার সার্ভিসকে বলব আইন মেনে যত দ্রুত এই জায়গাটা পরিষ্কার করে দেওয়া যায়। ‘যদি তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে দিয়ে অস্থায়ীভাবেও যদি বসতে পারে, ঈদের এই বাজারে কিছুটা হলেও রিকভার করতে পারে। সবকিছু তো আর রিকভার করতে পারবে না। সেটার ব্যবস্থা আমরা ডেফিনিটলি করব।’
বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, যারা পোড়া টিন ও লোহা কিনেছেন, তারা যত দ্রুত নিয়ে যাবেন তত দ্রুত ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে বসতে পারবেন। অন্যদিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, শুধু বসলেই হবে না, সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে। উপরে প্লাস্টিক বা ত্রিপল ছাড়া অন্য কোনোকিছু গ্রহণযোগ্য হবে না। শনিবার দুপুর পর্যন্ত বঙ্গবাজারের ধ্বংস্তুপ থেকে প্রায় অর্ধেক মালামাল সরানো হয়েছে বলে ব্যবসায়ী নেতারা জানালেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেভাবে সরানো হচ্ছে তাতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ দেরি করে মালামাল সরানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সালাম নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ী। ‘মাত্র দুই-তিনটি ট্রাক দিয়ে এবং কম লেবার দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে, ইচ্ছা থাকলে ট্রাক ও লেবারের সংখ্যা বাড়িয়ে কাজ করতে পারে।’ গত মঙ্গলবার ভয়াবহ এক আগুনে পুড়ে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার। সেখানে কাঠ-টিনের ঘরে তৈরি কয়েক হাজার দোকান ছিল। পাশে তিনটি দালানের দোকানও পুড়েছে সেই আগুনে।
অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৫ হাজারের মতো; যারা সবাই ঈদের আগে নতুন পণ্য তুলেছিলেন দোকানে, যার অধিকাংশই পুড়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য অনলাইন জিডি ক্যাম্প
বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য শাহবাগ থানার পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে অনলাইনে জিডি নেওয়া হচ্ছে। শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যেন থানা পর্যন্ত আসতে না হয়, সে কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুদিনে কয়েকশ জিডি হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাচ্ছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিচ্ছেন, ব্যাংক ঋণ থাকলে বলছেন সে অনুযায়ী আমরা লিখে জিডি করে দিচ্ছি। এটা পরবর্তীতে তাদের অর্থিক সহায়তা, ব্যাংকসহ সব ধরনের কাজে লাগতে পারে।’ ব্যবসায়ী জামাল জানান, তিনি সহজেই এখানে জিডি করতে পারছেন। দোকানের নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ঘটনা মুখে বলে দিলেই দায়িত্বরত কর্তকর্তা জিডি করে প্রিন্ট কপি দিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসকের তথ্য কেন্দ্র
ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বঙ্গবাজার এলাকায় একটি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।শনিবার দুপুরে প্রচ- রোদের মধ্যে শত শত ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের নাম নিবন্ধন করেন। রোভার স্কাউট সদস্যরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ নিচ্ছেন এবং থাকায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হলে এসব তথ্য ওই ব্যবসায়ীর কাজে আসবে বলে জানান রোভার স্কাউটস সাদমান। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। রোববারের মধ্যে তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। ‘মূল ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিপূরণ পাবে, এতে দোকান মালিকদের বাদ দিয়ে তাদের ভাড়াটিয়ারা পাবে। তবে নিজ দোকান ভাড়া না দিয়ে ব্যবসা করলে সে বিষয়ে মালিকই ক্ষতিপূরণ পাবেন।’