বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব চূড়ান্ত

পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব

এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে টানেল যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ♦

নিজস্ব প্রতিবেদক »

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে যেকোনো বিনিয়োগকারী স্বচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে পারেন। এখন পর্যন্ত ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তাদের অনেকে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ এলাকায় ১৫২টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৮০ শতাংশ দেশি-বিদেশি যৌথ এবং পুরোপুরি দেশি মালিকানার প্রতিষ্ঠানও আছে।’

তিনি গতকাল মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে পরিদর্শনে এলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন। এছাড়া দুপুরে ডিসিপার্ক, চট্টগ্রাম বন্দর এবং সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর টানেল পরিদর্শন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আরও বলেন, ‘আমরা মূলত বাংলাদেশের গেম চেঞ্জার প্রজেক্ট বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি দেখতে এসেছি। যেকোনো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন- বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও কী কী করণীয় আছে সেটা নির্ধারণ করেছি। দ্রুততার সঙ্গে পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এখানকার জনগোষ্ঠী যেসব প্রাকৃতিক সুবিধা পেত, সেটা যাতে কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না হয়, বরং আরও বৃদ্ধি পায় সেটা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। এখানে ১৩৯টি পরিবার ছিল। তাদের ঘর করে দেওয়া হবে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর ৩৩ হাজার ৮০০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ শিল্পনগরে ইতোমধ্যে এশিয়ান পেইন্ট, নিক্কন, সামুদাসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে গেছে। আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান আগামী বছর থেকে উৎপাদনে যাবে। এছাড়া অনেকগুলো পাইপলাইনে আছে। এখানে পর্যায়ক্রমে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা আছে। প্রথম ধাপে ৭ লাখ এবং প্রকল্প সম্পন্ন হলে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের টার্গেট আছে।’

যেকোনো বড় প্রকল্পে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক, সুয়ারেজ, বিদ্যুৎ, কেবল নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা; এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখানে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কী কী করণীয় তা নিয়েও আলোচনা করেছি। আশা করি, পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে এখানে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।’

মুখ্যসচিব আরও বলেন, ‘এখানে জেটি তৈরি করা হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে। ২৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এখানে আনুমানিক ১৪ লাখ মানুষ কাজ করবে। তাদের আবাসন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিনিয়োগের নিরাপত্তা, শিল্প কারখানার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখতে হবে। এ জন্য থানাসহ যেসব অবকাঠামো প্রয়োজন সেগুলো করা হবে।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফা কামাল, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। মুখ্য সচিবকে অর্ভ্যথনা জানান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।

মতবিনিময় শেষে তিনি বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের পরিকল্পিত জেটি এলাকাসহ তিনটি কারখানা পরিদর্শন করেন এবং শেখ হাসিনা সরোবরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল পরিদর্শন
মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু টানেল পরিদর্শন করেন। সেখানে তাকে অর্ভ্যথনা জানান টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ।

টানেলের দক্ষিণ মুখে সাংবাদিকদের মুখ্যসচিব বলেন, ‘সরকারের একটি সিগনেচার প্রজেক্ট হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেল হচ্ছে গর্ব করার মত আমাদের বড় একটি সাফল্য। এটি নিয়ে সারাদেশের মানুষ গর্ববোধ করছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী টানেল উদ্বোধন করবেন এবং জনসভায় তিনি বক্তব্য দেবেন। বঙ্গবন্ধু টানেল শুধুমাত্র আনোয়ারা ও পতেঙ্গাকে সংযুক্ত করবে তা না। টানেলের মাধ্যমে ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্ট বাস্তবায়িত হয়েছে।’

এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে টানেল যুক্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছি।

‘টানেলকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। ৩ দশমিক ৩১ কিলোমিটারের টানেল পার হতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট।’

টানেলের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টানেলের নিরাপত্তায় সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে টানেলের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে আমরা যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবো। টানেলের মাধ্যমে কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগও সহজ হবে।’