সংবাদদাতা, কাউখালী :
৩ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় সে। মাধ্যমিকের শুরুতে পড়ালেখা চলাকালীন সময়ে ২০০৩ সালে পাড়িজমান ঢাকায়। যোগ দেন বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে। সৈনিক হিসেবে নয়। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা আনসার দলের ৭ নম্বর জার্সিতে মাঠ কাঁপিয়েছেন। একই সময়ে লাল সবুজের জার্সি গায়েও মাঠ কাঁপিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলের খেলোয়াড় হিসেবেও। শুধু ফুটবলই নয়। তার পাশাপাশি শুরু করেন তায়কোয়ান্দো। এর মাঝেই বিয়ে, সংসার, অতঃপর ২০১৭ সালে কন্যা সন্তানের মা। এখানেই শেষ হতে পারতো তার ক্রীড়া জীবন। কিন্তু থেমে যাওয়ার মেয়েতো নয় সে। আবার শুরু করে নতুন ধারায়, নতুনত্বের দিকে। ফুটবলের পাশাপশি তায়কোয়ান্দো খেলায় গভীর মনোনিবেশ করেন সে। অল্প সময়ে কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে ফিট করে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস ২০২০ তে জিতে নিয়েছেন দুই দুইটি স্বর্ণ পদক।
২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়া গেমসে বাংলাদেশে হয়ে তায়কোয়ান্দোতে অংশগ্রহণ দিয়ে শুরু হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গন। সেবার সফলতা না আসলেও হাল ছাড়েনি সে, বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস ২০২০ এ তায়কোয়ান্দো তে একক ও দলীয়ভাবে ৭ এপ্রিল ২টি স্বর্ণ পদক নিজের করে নেন মাইনু। লাল সবুজের জার্সি গায়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবলে ২০১০ সালের সাউথ এশিয়া গেমসে ব্রোঞ্জ, ২০১৬ সালে ব্রোঞ্জ ও ২০১৭ সালে সার্ক ভূক্ত দেশগুলোর মধ্যকার খেলায় রৌপ্য জিতে বিশেষ অবদান রাখেন।
রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদরের পার্শবর্তী গ্রাম কচুখালী এলাকার নিহ্লাঅং মারমা ও চিং¤্রাউ মারমার মেয়ে মাইনু মারমা। নিংহ্লাঅং মারমার ৬ সদস্যদের পরিবারের বড় মেয়ে উনুপ্রু মারমা, তারপর সুইনুপ্রু মারমা, মাইনু মারমা ও উসিংমং মারমা বাবলু। বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস ২০২০ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে কথা তার সাথে। কথা হয় তার বড় বোন সুইনুপ্রু মারমার সাথেও। সুইনুপ্রু জানালেন দুইবোনের খোলোয়াড়ি জীবনের সফলতার গল্প। ২০০৩ সালে একই সাথে কাউখালী ছেড়ে দুইবোন খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আনসার বাহিনীতে। যোগ্যতার বলে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলেও। এতক্ষণ জানছিলাম মাইনু মারমা গল্প। এখন না হয় সুইনুপ্রুকে নিয়েই বলি।
সুইনুপ্রু মারমা, মাইনু’র আপন বড়বোন। ২০০৩ সালে আনসার মহিলা ফুটবল দলে যোগ দিয়ে মাত্র ২ বছরের মাথায় জায়গা করে নেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে। আদায় করে নেন ১০ নম্বর জার্সি। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খেলেন জাতীয় দলের হয়ে। জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে সে এএফসি কোচিংয়ে ডিপ্লোমা পার্ট-১ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেরারেশন টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্ট হেড অফ উইমেন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি মহিলা ফুটবল দলের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুইনুপ্রু।
বর্তমানে মাইনু এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন। দিচ্ছেন এই দলের নেতৃত্বও। মাইনু এই প্রতিবেদকে জানালেন তার স্বপ্নের কথা। বললেন, সাউথ এশিয়া গেমসে স্বর্ণ জয়ই তার বর্তমান লক্ষ্য। এজন্য কঠোর পরিশ্রম আর অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতও করছেন নিজেকে। এজন্য সকলের কাছে দোয়াও চেয়েছেন মাইনু।
খেলা