বক ও বাঘের গল্প

ছড়ায় ঈশপের গল্প

রফিকুল ইসলাম সুফিয়ান »

মাংস খেতে গিয়ে বাঘের
ফুটলো গলায় হাড়,
এই নিয়ে তোলপাড়।

ব্যথায় কাতর, বন্ধ খাওয়া;
যাকেই দেখে কয়-
হাড়টা খুলে দে না রে ভাই
পাসনে মোটেই ভয়।

মাংস আমি খাই না এখন
ধর্মে দিছি মন,
ধ্যান করে তাই কাটাই সারাক্ষণ।

যাচ্ছিলো এক শেয়াল হেঁটে পথে
একটু দূরেই ঝোপের ওপার হতে,
বাঘ ডেকে কয়-
এই যে ভায়া শেয়াল!
একটু কর খেয়াল।
গলায় আমার হাড় ফুটেছে
দাও না খুলে ভাই,
দিচ্ছি কথা, ভয়ের কারণ নাই।

ইনাম পাবে, টাটকা-তাজা
মুরগি দুচারখানা,
চাইলে পাবে আরো অনেক
নেই যে তাতে মানা।

মাংস আমি খাই না এখন
ধর্মে দিছি মন,
ধ্যান করে তাই কাটাই সারাক্ষণ।

শেয়াল বলে, তাই যদি বা হবে
গলায় সে হাড় ফুটলো কেন তবে?

বলো না ভাই! এটাই ছিলো ভুল!
দিচ্ছি এখন ভুলের সে মাশুল।

সুস্থ হয়ে সে ভুল তুমি
করবে আবার, তাই;
মুচকি হেসে বললো শেয়াল-
এখন তবে যাই।

বাঘ, অসহায়, করবে কী যে!
পায় না ভেবে, পায় না নিজে;
হঠাৎ বাঘের পড়লো নজর
ঝোপে জলার ধারে,
একটি হরিণ দেখছে তাকে,
দেখছে আড়ে আড়ে।

এই তো সুযোগ, ডাক দিয়ে কয়-
হরিণ ভায়া শোনো-
ভয় পেয়ো না কোনো।
গলায় আমার হাড় ফুটেছে
কষ্টে আছি বড়ো,
দাও না খুলে হাড়টা রে ভাই
একটু দয়া করো।

মাংস আমি খাই না এখন
ধর্মে দিছি মন,
ধ্যান করে তাই কাটাই সারাক্ষণ।

ইনাম পাবে, অনেক ইনাম-
মিষ্টি কচি পাতা,
আরো পাবে, দিচ্ছি কথা
চাইবে তুমি, যা-তা।

হরিণ বলে, কিন্তু খানিক
সন্দেহ যে ধরে,
মাংস খাওয়া ছাড়লে এ হাড়
বিঁধলো কেমন করে!

বলো না ভাই! এটাই ছিলো ভুল!
দিচ্ছি এখন ভুলের সে মাশুল।

জানি জানি সুস্থ হয়েই
মটকে দেবে ঘাড়,
এর চে ভালো হই যে পগার পাড়।

করবে কী বাঘ! পায় না ভেবে, হায়!
এমনি করেই প্রাণটা বুঝি যায়।
হতাশ হয়ে ছুটলো এলোমেলো,
এমন সময় কোত্থেকে এক
বকের আওয়াজ পেলো।

ওই তো কাছে, নয় বেশি দূর,
জলায় ঢিবির কাছে,
সাদা বক এক মাছের আশায়
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।

এই যে ভায়া, বক!
শুনছো নাকি? বলছি কথা হক।
ইনাম পাবে, অনেক ইনাম –
পাবদা, পুঁটি, মলা;
একটু যদি কাজ করে দাও
বাড়িয়ে চিকন গলা।

গলায় আমার হাড় ফুটেছে
বন্ধ নাওয়া-খাওয়া,
দয়া করে দাও না খুলে
শুধুই এটুক চাওয়া।

ভয় পেয়ো না, এখন থেকে
ধর্মে দিছি মন,
ধ্যান করে তাই কাটাই সারাক্ষণ।

মাছের লোভে বক হয়ে যায় রাজি,
বললো হেসে, আমি হলাম
এসব কাজের কাজী।

কাছে এসে, তাই বকে কয়—
হা করো তো দেখি,
ও মা! আটকে আছে
কী বড় হাড়, একি!

এক্ষুনি তা করছি আমি বার,
আরাম পাবে, আর ভেবো না আর।

অমনি যে বক তীক্ষ্ণ ঠোঁটের টানে
বের করে তা আনে।

আহ্! কী আরাম, আহ্!
ধন্য তুমি, ধন্য তুমি, বাহ্!

বাঘ মহাশয়, ইনাম এবার চাই,
ওয়াদাটুকুই; এর বেশি আর
নাই প্রয়োজন নাই।

গর্জে ওঠে বাঘ
ঠিকরে পড়ে রাগ-

আমার মুখে মুখ ঢুকিয়ে
আস্ত এলি ফিরে,
কৃতজ্ঞতা নেই কি মোটেও; কী রে?
কুড়মুড়িয়ে খাইনি মাথা-ঘাড়
খাইনি তাজা মাংস, বুকের হাড়।
এর চে বড় ইনাম কী আর চাস!
পেটে আমার ক্ষুধার আগুন
দেখতে কি তুই পাস?

বাঁচতে যদি চাস তো পালা
মুহূর্তে এইক্ষণে,
নইলে যাবি পেটের ভেতর
নির্জনে এই বনে।

প্রাণ বাঁচাতে পাখনা মেলে ওড়ে,
যায় চলে বক দূরে অনেক দূরে।

প্রশ্ন মনে বকের-
স্বভাব কি যায় ধূর্ত এবং ঠকের?