সিআরবির শিরীষতলায় চলছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। নজরুল উৎসবের নানামুখী আয়োজনে চতুর্থ দিনও ছিলো উৎসবমুখর। এদিন মেলায় এসেছে বেশ কয়েকটি নতুন বই। যার মধ্যে কবিতার বইয়ের সংখ্যাই বেশি।
মাহমুদ উল হক নামে একজন এসেছেন বই মেলায় নতুন বইয়ের খোঁজে। এবারের বইমেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বইমেলার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। কারণ লোক সমাগম কম। কিন্তু বইয়ের দামটা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ মনে হচ্ছে। যার কারণে পছন্দ হলেও সব বই কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’
‘ইতিহাস-ঐতিহ্যে মহেষখালী’ গবেষণামূলক বইয়ের লেখক জহির সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন আপন আলোর স্টলে। বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসবিদ সুনীতিকুমার কানুনগোই প্রথম মহেষখালী নিয়ে লিখেছেন। ওনার সংক্ষিপ্ত লেখাটাকেই আমি বৃহৎ পরিসরে লিখেছি। যেখানে ক্যাপ্টেন কক্সের কথা আছে, জমিদার কালিচরণ কানুনগোর কথা আছে, জমিদার অজিত কুমার রায় বাহাদুরের কথা আছে। মহেষখালী বানানে শ এবং ষ এর ব্যবহার কোনটি যৌক্তিক তা তুলে ধরেছি। এছাড়া আদিনাথ মন্দিরের কথা আছে। মগ বা রাখাইন সম্প্রদায়ের আগমন-বিস্তৃতি ও বাঘশিকারিদের ইতিহাস তুলে এনেছি। এভাবে একত্রিশটার মতো অধ্যায়ে মহেষখালীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে বিভক্ত করে বিশ্লেষনধর্মী আলোচনা করেছি।
শিরীষতলায় মেলায় গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিনগুলোর তুলনায় লোক সমাগম ছিলো কম। তবে ছায়াঘেরা শিরীষতলায় বেশ আনন্দে ঘুরছেন, বই দেখছেন, কিনছেন দর্শনার্থীরা বই কেনা ছাড়াও, অনেকেই দেখছেন অনুষ্ঠান।
নজরুল উৎসবকে সাজানো হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গানের দলীয় পরিবেশনা, দলীয় নৃত্য, একক সংগীত ইত্যাদি। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ কাজী নুরুল আমিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা একটি ত্রিকোণ সম্ভাবনা তৈরি করে গেছেন। সাধারণ মানুষ যাতে খেতে পারে, বাঁচতে পারে এগুলো বঙ্গবন্ধুরও স্বপ্ন ছিলো, যেগুলোর কথা নজরুল বলে গেছেন। আহমদ ছফা বলেছেন নজরুল আমাদের মানসপুত্র। নজরুল আমাদের সমাজে নারীদের অবদানের কথা বলেছেন, তাদের অধিকারের কথা বলেছেন। তবে এখনও সেই অর্থে নারীদের মুক্তি মেলেনি। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে তবে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই নারীরা আসলে পুরুষের দ্বারাই পরিচালিত হয়। সুতরাং নজরুলের আদর্শ ধারণ করলে সমাজের এই বৈষম্যগুলো ঘুচে যেতো। হিন্দু -মুসলামের মধ্যে যে দূরত্ব, দ্বন্ধ সে বিষয়ে তিনি লেখনী ধারণ করেছেন। আমরা যদি তাঁর আদর্শকে, চেতনাকে ধারণ করতাম তাহলে আমাদের অনেকটুকু দৈন্য ঘুঁচে যেতো।’
ধারাবাহিক আয়োজনে আগামী দিন থাকবে কবিতা উৎসব। উৎসবে থাকবে কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি।
চতুর্থ দিনে বইমেলায় এসেছে নতুন কয়েকটি বই। যার মধ্যে আপন আলো প্রকাশনী থেকে জহির সিদ্দিকীর ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মহেষখালী।’ অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনী থেকে অনীশ দাস অপুর রোমান্টিক থ্রিলার ‘নিম্ফোম্যানিয়াক’, মুসাদ্দিকুল ইসলামের কবিতার বই ‘কাগুজে প্রেম নামা।’ শৈলী প্রকাশনী থেকে জাহাঙ্গীর আজাদের কবিতার বই ‘যে যৌবন শঙ্খিনীর’ ও মাইছুরা ইশফাতের’ বোহেমিয়ান মন।’ এছাড়া বই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে সাদিকুল নিয়োগী পন্নীর ৫ম গল্পগ্রন্থ ‘আতশবাজী’। বইটিতে ঘামাচির অপারেশন, পারফিউম, প্রেম প্রশিক্ষণ, জামিল ভাইয়ের বাইক, কোষ্ঠকাঠিন্য, চা কিংবা কফির গল্প, ছাদবাগান, কিপটে শহিদুল, বাজি, কাকার ফটোগ্রাফি, তুফান, আরিফ ভাইয়ের সংগীতচর্চা, সর্বরোগ বিশেষজ্ঞ, ফেসবুক অপারেটর, আনারস, পান সমাচার, কালো চশমা, নাশতার দুরবস্থা, আতশবাজি ও কচি ডাব শিরোনামে মোট বিশটি গল্প রয়েছে। রম্যগল্পগুলোতে সামাজিক প্রেক্ষাপট, মানব চরিত্র ও জীবনের নানা অসংগতির বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কাওছার মাহমুদ। বর্ষাদুপুর প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদের মূল্য রাখা হয়েছে ২৭০ টাকা। মেলায় বইটি ২৬ নম্বর প্যাভেলিয়নে স্টুডেন্ট ওয়েজ/বর্ষাদুপুরের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।
এবারের বইমেলা চলবে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত। ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা এবং অন্যান্য দিনে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা।