জেনারেল হাসপাতালে সিট খালি আছে ১০টি ও ফৌজদারহাটে ১৩টি
# করোনায় নতুন হাসপাতালের খোঁজে চট্টগ্রাম,পাইপলাইনে রয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল, বন্দর হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতাল: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর #
ভূঁইয়া নজরুল :
হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগী। কিন্তু করোনা চিকিৎসায় হাসপাতাল কোথায়? তাহলে কি চিকিৎসা ছাড়াই মারা যাবে করোনা রোগীরা? আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে আর মাত্র ১০টি ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে খালি আছে ১৩টি বেড। দুই হাসপাতালে মিলিয়ে ২৩টি বেড। কিন্তু চট্টগ্রামে প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছে প্রায় একশ রোগী। এই রোগীদের চিকিৎসার কি হবে?
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের একজন সিনিয়র চিকিৎসক ডা. আবদুর রব গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। হু হু করে রোগী আসছে হাসপাতালে। এসব রোগীকে আমরা কোথায় ভর্তি করাবো? সিট খালি আছে মাত্র ১০টি।’
তিনি আরো বলেন, ১০টি আইসিইউ’র (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) মধ্যে সবগুলোতেই রোগী রয়েছে। এখন নতুন কোনো রোগীর আইসিইউ’র প্রয়োজন হলে দেয়া সম্ভব হবে না।
করোনা চিকিৎসা পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন অনেক রোগী রয়েছে যাদের সামান্য একটু অক্সিজেন সাপোর্ট পেলে বাঁচানো যাবে। কিন্তু এখন যদি আমরা রোগীদের ভর্তি করাতে না পারি সেই সাপোর্ট কীভাবে দেবো?
জেনারেল হাসপাতালে যেখানে ১০০টির মধ্যে মাত্র ১০টি সিট খালি রয়েছে সেখানে করোনা চিকিৎসায় নগরীর আরেক হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে মোট ৩০টি সিটের মধ্যে ১৭টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। আর ১৩ জন রোগীকে ভর্তি নিতে পারবেন। এবিষয়ে কথা হয় বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এম এ হাসানের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ৩০টির বেশি রোগী ভর্তি করা সম্ভব নয়। সেই হিসেবে হয়তো আর ১৩ জনকে ভর্তি করানো যাবে।’
তিনি আরো বলেন, আমার এই হাসপাতালে আবার আইসিইউ সাপোর্ট নেই। তাই মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে ফিল্ড হাসপাতাল রয়েছে সেখানে কিছু রোগী ভর্তি হতে পারে।
এদিকে ফিল্ড হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে ৫০ শয্যার হাসপাতালে ইতিমধ্যে ৩৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। সেখানেও আর ১৫ জনের বেশি রোগী ভর্তি নেয়ার সুযোগ নেই।
তাহলে কি চট্টগ্রামে আর মাত্র ৩৮ জন (জেনারেল হাসপাতালে-১০, বিআইটিআইডিতে ১৩ ও ফিল্ড হাসপাতালে ১৫) রোগী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে? এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘চিন্তার কোনো কারণ নেই কাল শুক্রবার কিছু রোগী ডিসচার্জ হবে তখন হাসপাতালগুলোতে কিছু সিট খালি হবে। একইসাথে আমরা বিকল্প হাসপাতালও চালু করার ব্যবস্থা করছি।’
বিকল্প হাসপাতাল কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আজ বৃহস্পতিবার রেলওয়ে হাসপাতাল ভিজিট করেছি। সেখানে ১০০ জনকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। একইসাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জেনারেল হাসপাতাল ও বন্দর হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালের প্রতিটিতে ১০০টি করে সিট রয়েছে। তাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সমস্যা হবে না। ইতিমধ্যে আমরা নতুন চিকিৎসকও পেয়ে গেছি। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা এসব হাসপাতালগুলোতে সেই ধরনের চিকিৎসা উপকরণ নেই? এমন প্রশ্ন করা হলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, মহামারির সময়ে কখনো প্রস্তুতি নিয়ে কিছু করা যায় না। তবে গণহারে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব, সমস্যা হবে না, আমাদের সেই পদ্ধতি জানা আছে।
চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালের কোনো ক্রাইসিস হবে না উল্লেখ করে চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সদরঘাটে আমাদের জেনারেল হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া ভাটিয়ারিতে শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের একটি হাসপাতাল রয়েছে। তখন পুরো হাসপাতালটি করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে। আমরা এবিষয়ে কথা বলে রেখেছি। একইসাথে রেলওয়ে ও বন্দর হাসপাতাল তো রয়েছেই। তাই সমস্যা হবে না বলে মনে করছি।
তবে আইসিইউ নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে অনেক চিকিৎসক মনে করছেন। এবিষয়ে বিআইটিআইডির পরিচালক ডা. এম এ হাসান বলেন, ‘আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গড়ে ৫ শতাংশের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে নতুন আইসিইউ ইউনিট লাগবে।‘
এদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে সব রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। মুমুর্ষু রোগীদের শুধু হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বাকিদের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। তবে হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫১৪ জন। এদের মধ্যে মারা গেছে ২৮ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে ৯৩ জন। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত বুধবার চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ জন, এর আগে মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৫ জন ও ১১ মে আক্রান্ত হয়েছিল ৪৮ জন। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল।