বিশ্ব ফুটবলকে যিনি মোহনীয় করে তুলেছিলেন ছন্দ আর গতিময়তায়, নৈপুণ্যের কুশলতায় যার জুড়ি নেই, বিশ্বনন্দিত সেই ফুটবলার দিয়্যাগো ম্যারাডোনা পাড়ি দিয়েছেন অনন্তলোকে। গত বুধবার আর্জেন্টিনার তিগ্রেতে নিজ বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কিছুদিন আগে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফেরেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে আর্জেন্টিনায় শোকের মাতম চলছে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তদের শোক ফুটবলে ম্যারাডোনার কীর্তিকে মহান করে তুলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার কেÑপেলে আর ম্যারাডোনার ভক্ত আর ফুটবল অভিজ্ঞদের মধ্যে এই প্রশ্নে বিতর্কের মীমাংসা হয়নি। দুজনই সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে বরিত হয়েছেন। ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক আর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফুটবলের কালো মানিক পেলে। ম্যারাডোনার মহাপ্রয়াণের পর কাঁদলেন তিনি।
ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ গভীর অনুভূতি নিয়ে টুইট করেছেন, ‘আপনি আমাদের বিশ্বের সেরা বানিয়েছেন, আমাদের জীবনে অপরিমেয় সুখ এনে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা যে আপনি জন্মেছেন’।
১৯৮৬ সনে ম্যারাডোনার একক কৃতিত্বে বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় স্মরণীয় হয়ে আছে তাঁর দুটি গোলের নিপুণতায়। প্রথম গোলটি হাত দিয়ে করেছেন, এমন বিতর্ক থাকলেও সেটি মীমাংসিত হয়েছে, তা রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। ম্যারাডোনা এটিকে বলেছেন, ঈশ্বরের হাত। ইতিহাসে সেই গোলটির নাম দেয়া হয়েছে ‘হ্যান্ড অব গড’। পরের গোলটি ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে একাই বিপক্ষের মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগের সকল খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোল করেছেন। অসামান্য সেই ড্রিবলিং যা কোটি কোটি ভক্তকে উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনায় আজো পূর্ণ করে রেখেছে। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তুলে নেয় আর্জেন্টিনা। ঐ আসরে সেরা ফুটবলারের সম্মান গোল্ডেন বল ও জিতে নেন তিনি। এর আগে অনূর্ধ্ব’২০ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জিতেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত তাঁর শেষ বিশ্বকাপ আসরটি ছিলো বেদনার আর ভক্তদের জন্য চরম বিষাদের। ডোপ টেস্টে নিষিদ্ধ মাদক নেয়ার দায়ে তিনি অভিযুক্ত হন এবং দ্বিতীয় পর্ব থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস এইরেসের এক ছোট শহরে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। কালক্রমে তিনি বিশ্বের প্রিয় ম্যারাডোনা হিসেবে সম্মানীয় হয়েছেন। দেশের জন্য বয়ে এনেছেন অনন্য সম্মান। ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির হয়ে খেলে দলটিকে অসাধারণ সব জয় উপহার দিয়েছেন। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। আমাদের দেশে ম্যারাডোনার প্রবল ভক্ত কিশোর, তরুণ ও প্রবীণরা। বিশ্বকাপের খেলা এলে ঘরে ঘরে ওড়ে আর্জেন্টিনার পতাকা। এটি ম্যারাডোনার যাদুকরি খেলার আকর্ষণেই হয়েছে। ম্যারাডোনার আকস্মিক মৃত্যুতে আমাদের দেশের মানুষ গভীরভাবে শোকাহত। ফুটবল বিশ্বে নন্দিত হয়ে থাকবেন ম্যারাডোনা।
মতামত সম্পাদকীয়