আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এক সিদ্ধান্তে ইসরায়েল ফিলিস্তিন ভূখ-ে যে সব অপরাধ সংঘটিত করেছে সে সবের বিচার চাইতে পারবে ফিলিস্তিনবাসীরা। গত শুক্রবার আইসিসির বিচারকরা এই সিদ্ধান্ত দেন। তাদের জারি করা এক রুলে বলা হয়েছে, ইসরাইলের দখলকৃত পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা ও পূর্ব জেরুজালেমকে এখন থেকে আদালতের এখতিয়ারে আনা হলো। এই ঘোষণার ফলে এসব এলাকায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর যে সকল নারকীয় অপরাধ ও নির্যাতন চালিয়েছে সে সব ব্যাপারে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ জানাতে ও বিচার চাইতে পারবে। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিতায়েহ বলেছেন, আইসিসির এই সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচার ও মানবতা, সত্যের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা এবং শহীদদের পরিবারদের জন্য এক বড় বিজয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আইসিসির এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। উল্লেখ্য, ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়। সদস্য না হলেও অন্যায়, অপরাধ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিবেক নিশ্চুপ থাকতে পারে না। আইসিসির এই সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা, শান্তি ও মানবতার পক্ষে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
১৯৬৭ সালে ৬দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত এলাকায় নির্বিচারে শিশু হত্যাসহ নারকীয় অপরাধ করে আসছে ইসরায়েল দশকের পর দশক। ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ইসরায়েল অবৈধ বসতি গড়ে তুলেছে। তাদের নিরাপত্তা বাহিনী এসব এলাকায় জেঁকে বসেছে।
জাতিসংঘ এবং বৃহৎ শক্তিগুলো ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের কথা বললেও ইসরায়েল ও তাদের মুরুব্বি আমেরিকা ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ক্রমাগত বাধা দিয়ে এসেছে। বরং ফিলিস্তিনবাসীর ওপর ইসরায়েলের নিপীড়ন অব্যাহতভাবে চলেছে যা বিশ্ব সভ্যতা ও বিশ্ব মানবতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার বিগত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ইসরায়েলকে শক্তিশালী করেছে। আমরা আশা করি জো বাইডেনের সরকার ট্রাম্পের চ-নীতি থেকে সরে আসবে এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে শান্তি আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নেবে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসবে।
ফিলিস্তিনবাসীর ওপর নির্যাতন এবং ফিলিস্তিন ভূ-খ-ের অবৈধ দখল ও ইহুদি বসতি নির্মাণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, আরব রাষ্ট্রগুলি অনেক আগেই এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যেতে পারতো যেমন করে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের পক্ষ নিয়ে আইসিসিতে অভিযোগ উত্থাপন করেছে। বর্তমানে এই বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ওআইসি জাতিসংঘেও দৃঢ় ভূমিকা নিতে পারেনি বরং কিছু আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে সখ্য স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আইসিসি’র এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের আগ্রাসী ও অত্যাচারী ভূমিকা বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হবে ক্রমশ। আমরা আশা করি ফিলিস্তিনবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করবে, ইসরায়েলের নারকীয় অপরাধের বিষয়সমূহ আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য উত্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করবে, এ ব্যাপারে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন, শান্তিকামী বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞরা ফিলিস্তিনবাসীর সমর্থনে এগিয়ে আসবেন।
মতামত সম্পাদকীয়