ফিডার রোড ২ নির্মাণে তৃতীয় প্রস্তাবনায় চোখ

বিরোধ মিটবে সিডিএ-ওয়াসার

ভূঁইয়া নজরুল <<<

আউটার রিং রোডের ফিডার রোড-২ বাস্তবায়নে কারিগরি কমিটির তৃতীয় প্রস্তাবনা বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। আর এতে চট্টগ্রাম ওয়াসার সুয়্যারেজ প্রকল্প কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না। সম্প্রতি এই দুই সংস্থার বিরোধ নিরসনে গঠিত কারিগরি কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে এমন মত দিয়েছে।

কারিগরি কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়াসা এ জায়গায় সুয়্যারেজ প্রকল্পের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছে। এখন মাঝখান দিয়ে রাস্তা গেলে প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রকল্পের উত্তর প্রান্ত সীমা দিয়ে রোডটি নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে হয়তো রোডটি একটু বাঁকা হবে, কিন্তুওয়াসার প্রকল্পের তেমন ক্ষতি হবে না।’
এটি কী ওয়াসার জায়গার ওপর দিয়ে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডান দিক দিয়ে গেলে সিডিএ চাইলে ওয়াসার জায়গা অধিগ্রহণ করে তাদের রোড নির্মাণ করতে পারে। অথবা ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গা অধিগ্রহণ করতে পারে।

বাকি দুটি প্রস্তাবনা কী গ্রহণযোগ্য নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাকি দুই প্রস্তাবনার মধ্যে একটি ছিল বিদ্যমান চলাচলের পথ (যা ওয়াসার প্রকল্পের মাঝখান দিয়ে গেছে) ব্যবহার করে রোড নির্মাণ। আরেকটি ছিল বিদ্যমান পথের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে রোড নির্মাণ করা। এদের মধ্যে একটিও যুতসই হবে না বলে আমাদের মনে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে আরও একটি প্রস্তাবনা ছিল। ওয়াসার প্রকল্পটি দক্ষিণ দিকে সরিয়ে নিয়ে, সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ডিপো উত্তর দিকে নিয়ে এসে বিদ্যমান চলাচলের জায়গার রোড নির্মাণ করা। কিন্তু সেটাও বাস্তবসম্মত হবে না।’
কি আছে তৃতীয় প্রস্তাবনায়?
তৃতীয় প্রস্তাবনায় রয়েছে হালিশহর মুনির নগর থেকে আসা রোডটি ওয়াসার জায়গার কাছে আসার পর ডান দিকে ঘুরে পূর্ব প্রান্ত দিয়ে অগ্রসর হয়ে বাম দিকে টার্ন নিয়ে প্রকল্পের উত্তর প্রান্ত ঘেঁষে সোজা পশ্চিমে আউটার রিং রোডে গিয়ে যুক্ত হবে।
এ বিষয়ে আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে কারিগরি কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছি। তিনটি প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং এখন সুয়্যারেজ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। তারপর আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। তবে আমরা চাই উভয় প্রকল্প যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হতে পারে।’

যেহেতু নতুন প্রকল্প, তাই জায়গা অধিগ্রহণ করে ফিডার রোড বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খালি জায়গা থাকলে অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজতর হয়। কিন্তু বাড়িঘর কিংবা স্থাপনা থাকলে তা অনেক কষ্টসাধ্য।’ তবে ওয়াসার প্রকল্পের উত্তর প্রান্তে এখনো খালি জায়গা রয়েছে।
এদিকে সিডিএ’র ফিডার রোড ও ওয়াসার সুয়্যারেজ প্রকল্প বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও সুয়্যারেজ প্রকল্পের পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ সম্প্রতি কারিগরি কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি ফিডার রোডটি উত্তর প্রান্ত দিয়ে নির্মাণের বিষয়ে। তারপরও এ বিষয়ে গঠিত কমিটি লিখিতভাবে প্রতিবেদন দেবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সাগরের পাড় ঘেঁষে ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোডের নির্মাণ প্রায় শেষ। এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি ফিডার রোড থাকলেও প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দুটি ফিডার রোড নির্মাণের কথা। এরমধ্যে সাগরিকা প্রান্তের তিন নম্বর ফিডার রোডের কাজ চলমান থাকলেও অধিগ্রহণ জটিলতায় স্টিলমিলস খেজুরতলা এলাকার ফিডার রোড-১ এখনও নির্মাণ শুরু করা যায়নি। বর্তমানে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ফিডার রোড-২ ( বড়পোল থেকে রিং রোডে যুক্ত হওয়া) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই রোডটি নির্মাণ করা গেলে আউটার রিং রোডের সাথে নগরের যোগাযোগ সহজতর হবে। তাই ফিডার রোড-২ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যা বড়পোল, শারীরিক শিক্ষা কলেজ ও মুনির নগর হয়ে রিং রোডে গিয়ে যুক্ত হবে। এখন সমস্যা হলো মুনির নগর থেকে রিং রোডে যুক্ত হওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১৬৩ একর জায়গা রয়েছে। যেখানে ওয়াসা ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আর এতেই ফিডার রোড কিভাবে রিং রোডের সাথে যুক্ত হবে তা নিয়ে সরকারি এই দুই সংস্থার সাথে বিরোধের সূত্রপাত হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে ফিডার রোড-২ কিভাবে রিং রোডের সাথে যুক্ত হবে।