ফাঁদ

অলোক আচার্য :

রাতে খেতের চারপাশে পেতে রাখা ফাঁদে প্রচুর ইঁদুর ধরা পড়েছে দেখে বেশ খুশি হয় রমিজ মিয়া। গত বছরের ফসলের চারভাগের একভাগই গেছিল ইঁদুরের পেটে। ভাবলেই ইঁদুরের ওপর বেজায় মেজাজ চটে যায় তার। তার এত কষ্টের ফসল! আর ইঁদুরের বাচ্চারা কিনা আরামে রাতভর তা সাবাড় করে দিয়েছে! মুখ থেকে দু’চারটা গালি বেরিয়ে যায় মনের অজান্তেই। এ বছর বোরোর চারা লাগানোর পরপরই সে ইঁদুর তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। পাশের গ্রামের আজগর বাঁশ দিয়ে ইঁদুরের ফাঁদ বানায়। তার কাছ থেকে সস্তায় সেই ফাঁদ কিনে এনেছে। কয়েকটা এমনিই দিয়েছে। ধানপাকার শুরুতেই সেই ফাঁদ রোজরাতে জমির চারপাশে পেতে রাখে সে। তারপর সকালে গিয়ে বেয়াড়া মৃত ইঁদুরগুলোকে ফাঁদ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আজও ইঁদুরগুলোকে ফাঁদ থেকে ছাড়াতে গিয়ে মনে মনে আনন্দিত হয় সে। গত বছর জমির ধান পরিমাণ মতো না পাওয়াতে মহাজনের ঋণশোধ করতে পারেনি। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার রমিজ মিয়ার। রোজগার বলতে পৈতৃকসূত্রে পাওয়া এই জমিটুকুই। প্রতিবছর সারবীজ কেনার জন্য মহাজনের দ্বারস্থ হতে হয় তাকে। চড়াসুদে ঋণ নেয় সে। জমি থেকে যা ফসল আসে তার অর্ধেকটা বিক্রি করে সেই দেনা মেটাতে হয়। এ বছর মহাজনের সব ঋণশোধ করে দিতে পারবে। তার আগে ইঁদুরগুলোকে কোনোভাবেই ফসলের ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেওয়া যাবে না। মনে মনে ভাবে সে। প্রতি বছর ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ে তার জীবনটাও ফাঁদে আটকে থাকা ইঁদুরগুলোর মতোই হয়ে গেছে। কোনোভাবেই বের হতে পারে না। এসব ভাবতে ভাবতেই ফাঁদ থেকে মৃত ইঁদুরগুলো ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রমিজ মিয়া।