হালদা ভ্যালিতে এবার লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কেজি
নিজস্ব প্রতিনিধি, ফটিকছড়ি
ওষুধি গুণে ভরপুর বিদেশি এক ফলের নাম ড্রাগন। ক্যান্সার থেকে শুরু করে ডায়বেটিসসহ নানা রোগের কার্যকর এই ড্রাগন ফল। এ ফল দেখতে যেমন লোভনীয় খেতেও তেমন সুস্বাদু। ঔষুধি গুণে গুণান্বিত, রসালো এবং মুখরোচক এই ড্রাগন ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন দেশের অন্যতম হালদা ভ্যালি চা বাগানের মালিক শিল্পপতি নাদের খান। হালদা ভ্যালিতে চা চাষের সাফল্যের পর নতুন মাত্রায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি পুষ্টি ও ঔষুধি গুণসমৃদ্ধ ড্রাগন ফলের চাষ।
২০০৪ সালে শখের বসে থাইল্যান্ডের এ ড্রাগন ফলের চারা কিনে আনেন হালদা ভ্যালি চা বাগানের মালিক শিল্পপতি নাদের খান। চারা আনতে দিলেও মাটি আনতে না দেয়ায় শংকা ছিল এখানে ফল ফলানো যাবে কিনা। তবে পরিচর্যার মাধ্যমে বেড়ে উঠা চারাগুলোতে এখন ফল ধরে দূর হয় সে শংকা। এজন্য থাইল্যান্ড থেকে একজনকে ট্রেনিং দিয়ে আনা হয়। শুরুতে ৮শ’ চারাগাছ রোপণ করা হয় হালদা ভ্যালি চা বাগানের অনাবাদি জায়গায়। গাছ লাগানোর ৩-৪ বছর পর ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। প্রথমদিকে ফলন কম হলেও এখন প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে। বর্তমানে ১৫ একর সমতল ও পাহাড়ি ঢালুতে চাষ হয়েছে বহুগুণে ভরপুর এই ড্রাগন ফলের।
সম্প্রতি হালদা ভ্যালি চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগনগাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করছিলেন কর্মীরা।
ড্রাগনের চাষ সম্পর্কে কথা হয় হালদা ভ্যালি ড্রাগন ফল বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আবু বক্করের সঙ্গে। তিনি বলেন, ড্রাগন গাছের শাখা থেকে নতুন চারা হয়। সেই চারা কেটে মাটিতে লাগালে নতুন গাছ হয়। একেকটা খুঁটিতে চারটি করে গাছ লাগানো যায়। বছরের যেকোনো সময় চারা লাগানো যায়। এপ্রিলে ড্রাগনের ফুল আসে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথমবার ফল সংগ্রহ করার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার এবং এভাবে প্রায় ছয় মাস ফল পাওয়া যায়। নভেম্বর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। পর্যায়ক্রমে ফলনও বৃদ্ধি পায়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দিনের সময় বৃদ্ধি করে সারা বছর এর ফলন পাওয়া সম্ভব।
হালদা ভ্যালি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, হালদা ভ্যালিতে প্রায় ১৫ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। গতবছর এ বাগান থেকে উৎপাদিত হয়েছে ২০ হাজার কেজি। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কেজি।
এ বাগানে উৎপাদিত ফল ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এখানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করা হয় তিন শ’ টাকায়। বাইরে এর দাম পাঁচ শ’ থেকে ছয় শ’ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লিটন দেবনাথ জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। ফটিকছড়িতে ড্রাগনের অপার সম্ভবনা রয়েছে। পুরো উপজেলা মিলে ২০ হেক্টর পাহাড়ি ও সমতল জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হালদা ভ্যালি ছাড়াও উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে আরো অনেক বাগান গড়ে উঠেছে।