চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘মাল্টি-স্টেকহোল্ডার কনসাল্টেশন ওয়ার্কশপ অন প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন চট্টগ্রাম সিটি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বলা হয়েছে, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে বছরে ৭০ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন (মোট উৎপাদনের প্রায় ২৭ শতাংশ) প্লাস্টিক বর্জ্য নালা, নর্দমা, খাল এবং জলাশয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীতে মারাত্মক দূষণের জন্য দায়ী। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, অর্থনীতি বিভাগ এবং মার্কেটিং বিভাগের একটি গবেষণা দল দক্ষিণ এশিয়ায় প্লাস্টিকমুক্ত নদী ও সমুদ্র বিষয়ক প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে গত ১০ মাসের বেশি সময় ধরে একটি গবেষণা চালায়।
গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, জেলেদের মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক জাল পড়ে থাকে সমুদ্রের তলদেশে। এটি ধীরে ধীরে ভেঙে তৈরি হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। প্লাস্টিক কণা মাছের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে। এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক মানব শরীরে ক্যান্সার, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বন্ধ্যাত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক এলাকায় প্রায় ১৯ হাজার নৌকা ও ট্রলার বছরে ৪০ হাজার ১১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিকের জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন (প্রায় ৭ শতাংশ) সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয় বা পরিত্যক্ত হয়। মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল ‘গোস্ট ফিশিং’-এর কারণে প্রতিনিয়ত বহু সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। তাছাড়া পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ইত্যাদি নদী থেকে প্রতিদিন ১-৩ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক বঙ্গোপসাগরে এসে পড়ছে। এতে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কর্মশালায় গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ২ থেকে ৭ মিটার স্তর শনাক্ত করেছে। এটি ড্রেজিংয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় নগরীতে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি।
তবে সেমিনারে আশান্বিত হওয়ার মতো সংবাদও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে পাঁচ মিলিয়নের বেশি বাসিন্দা বছরে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার (রিসাইক্লিং) করে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। আর এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন প্রায় ২০ হাজার ৫০২ জন শ্রমিক ও উদ্যোক্তা।
অনেক বছর ধরে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা নিয়ে সভা-সেমিনার-আলোচনা হচ্ছে কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল বর্জ্য যেন নালা, খাল, নদী, সাগরে না পরে সে বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থাও নিতে হবে। মানুষ ও প্রকৃতি তথা পৃথিবী নামক গ্রহটিকে বাঁচাতে হলে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ভয়াবহ পরিণতির কথা বলতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ