আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়েছে গতকাল। জাতিসংঘের মতে, ২০২১ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ হবেন প্রবীণ ব্যক্তি। ২০২২ সালে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করবে তারা ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তিদের তুলনায় ২৫ বছর বেশি বাঁচবে।
বাংলাদেশ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ ( ৯.২৮) প্রবীণ। সংখ্যায় যা দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৭১৯ জন। ২০১১ সালে যে হার ছিলো ৭.৪৭ শতাংশ। মূলত গড় আয়ু বাড়ার ফলে প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে। জাতিসংঘের মতে, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি। উন্নয়নশীল দেশে ৬০ বছর বয়স থেকে প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন।
একটি সময়ে বয়স্ক বা প্রবীণদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সমাজ বা রাষ্ট্র কিছুই ভাবতো না। কালের পরিক্রমা ও জাতিসংঘসহ নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের কারণে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান সরকার বয়স্কভাতাও চালু করেছে। এই ভাতা ভোগ করছেন প্রায় ২৬ লাখ প্রবীণ।
প্রবীণেরা পারিবারিকভাবেও হন অবহেলিত। এর কারণ হিসেবে উপার্জন কম থাকা, শরীরিক শক্তি কমে যাওয়া, শারীরিক নির্ভরশীলতা, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলো কাজ করে। বয়সের সাথে সাথে দেখা দেয় কিছু শারীরিক অসুস্থতা। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ডায়বেটিক, হৃদরোগ, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই বয়সের মানুষদের মাঝে দেখা দেয় সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, ঘুমের সমস্যা, স্মৃতিবৈকল্যসহ (ডিমেনশিয়া) বিভিন্ন মানসিক রোগ। এর কারণ হিসেবে কর্মজীবন থেকে অবসর, সন্তানদের সাথে দূরত্ব, পাওয়া না পাওয়ার হতাশা, অবহেলা-অযত্ন, শারীরিক কার্যক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়। ক্রমশ ছোট হয়ে আসা পরিবারগুলো আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও বয়স্ক ব্যক্তির দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায়। যার কারণে বৃদ্ধাশ্রম কনসেপ্টের উদ্ভব হয়। আমাদের দেশেও এখন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু বৃদ্ধাশ্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন সুপ্রভাতের প্রতিবেদকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বয়স্কদের আলাদা কোথাও পুনর্বাসন না করে যাতে তাদেরকে নিজ ঘরে রেখেই সার্বিক সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়। এ জন্য ওল্ড এইজ হেল্পিং এবং কো-অপারেশন বা ইনস্টিটিউট নামে সরকারের পক্ষ থেকে বৃদ্ধকালীন সহযোগিতার সংগঠন চালু করা যেতে পারে। যেখানে বয়স্কদের নিজ ঘরে থাকা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পরিবেশন করবে।’
পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ না দিলে সন্তানকে আইনের আওতায় আনার বিধান করেছে সরকার। তবে সবকিছু আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সমাজের অভ্যন্তরেও কাজ করতে হবে। মানুষকে মানবিক করে তুলতে হবে। তাহলেই হয়ত অসহায় প্রবীণরা বেঁচে থাকার কিছুটা অবলম্বন পাবেন।
এ মুহূর্তের সংবাদ