মৃত প্রবাসী কর্মীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ ও অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু। তারা বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংলাপে বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত উপস্থাপন করে বলেছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫৫৪ জন মৃত প্রবাসীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রবাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের গড় বয়স মাত্র ৩৭ বছর। কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রবাসে যাঁরা মারা যান, তাঁদের মধ্যে ৩১ শতাংশের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৬ শতাংশের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। আর ১৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেন। ২৮ শতাংশের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। বাকিরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুসনদে থাকা কারণ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তাঁদের পরিবার।
সংলাপে উপস্থাপন করা নিবন্ধে আরও বলা হয়, গত ১২ বছরে প্রবাসে ৪০ হাজার ৭১৩ কর্মীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালে দেশে এসেছে ৪ হাজার ৮১৩ কর্মীর মৃতদেহ। এত অল্প বয়সে মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। বিদেশে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই তাঁদের পাঠানো হয়। তাঁরা সেখানে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রবাসের মৃতদেহের সঙ্গে পাঠানো মৃত্যুসনদ যাচাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ময়নাতদন্ত করা হয় না। অথচ স্বাভাবিক মৃত্যু বলে পাঠানো অনেক মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃত প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মৃত্যুসনদে থাকা কারণ বিশ্বাস করে না। তাই মৃতদেহ দেশে আসার পর ময়নাতদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে নিবন্ধে।
নিবন্ধ উপস্থাপন করেন রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, মৃত্যুসনদ একেক দেশের একেক রকম। এতে মৃত্যুর কারণ বোঝাও যায় না। পরিবার মৃতদেহে ক্ষতের চিহ্ন পাচ্ছে, অথচ মৃত্যুসনদে সেসবের উল্লেখ থাকে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে একই রকম মৃত্যুসনদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অল্প বয়সে মৃত্যুর বিষয়টাও খতিয়ে দেখা উচিত।
বক্তারা বলেন, নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। আর উচ্চ অভিবাসন খরচ তুলতে গিয়ে বাড়তি পরিশ্রম করেও না পারার হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন পুরুষ কর্মীরা। ৮ ঘণ্টা কাজের বদলে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। মানুষ হিসেবে যাচ্ছেন একজন কর্মী, মারা গেলে ফিরে আসছেন কার্গো হয়ে। বিশ্বের সব দেশেই মৃতদেহকে কফিন হিসেবে কার্গোর মতো করে পরিবহন করা হয়।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত হলো, প্রবাসী কর্মীদের আয়। দেশের রিজার্ভ বাড়ছে তাদের টাকায়, মানুষের জীবনমান বাড়ছে তাদের টাকায় অথচ তাদের জীবনমান বাড়ানোর ক্ষেত্রে কারো যেন কোনো দায় নেই। সাধারণ মানুষ বলে এরা কর্মক্ষেত্রে না পায় সম্মান, না পায় দেশে সম্মান। এমনকি মৃত্যুর পরেও জোটে না যথার্থ সম্মান। এসব নিয়ে বলবার মতো মানুষ নেই, কোনো সংগঠন ও সংস্থাও নেই। এটা গভীর দুঃখজনক। এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া উচিত। তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ মুহূর্তের সংবাদ