৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর রবিবার প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে তিনি বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব, যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়, আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।’
আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করা। সে কথা উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে, আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে।’
তিনি বলেন, যে ক’দিন আছি সে সময়টুকু উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্যমতো দেশের এই সংকটকালে, সংকট উত্তরণে যেন নিজ নিজ মেধা সাধ্যমতো কাজে লাগাতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হয়ে যাব।’
এই কয়েকদিনের মধ্যে বেশকিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সে বিষয়ে সবাইকে ধৈয্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই এক ধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা, তা থেকে বের হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এ আহ্বানের সূত্র ধরে আমরাও বলতে চাই, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অনেকে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। মানুষের বাড়িঘরে হামলা, জ্বালিয়ে দেওয়া, লুটপাট করার মতো ঘটনা ঘটছে। এমনকি ফেনীতে বন্যা আক্রান্তদের বাড়িতে ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটেছে। জোর করে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা, শিক্ষকদের অপমান করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার মতো ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এসব বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা। মানুষের জীবনমালের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া।