প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির দামপাড়াস্থ কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘উচ্চশিক্ষায় অ্যাক্রেডিটেশন বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তা ছিলেন আইকিউএসি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির পরিচালক প্রফেসর ড. তৌফিক সাঈদ।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী প্রসেস। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার কাজ যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, তাতে যারা অংশগ্রহণ করছে, তাদের কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে তাদের মান নিয়ন্ত্রণ করা, তাদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা এবং সুনির্দিষ্ট মাত্রায় তাদের যে-শিখনফল তা অর্জিত হয়েছে কিনা দেখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কারণ আমাদের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী এখন উচ্চশিক্ষাখাতে আসছে। সামাজিক এবং সংস্কৃতিগত কারণে উচ্চশিক্ষায় যাওয়া এই অঞ্চলের সামাজিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কাম্য যোগ্যতা অর্জন করেছে কিনা, তাদের মধ্যে কর্মজগতে প্রবেশের দক্ষতাগুলো সৃষ্টি হয়েছে কিনা, তা একাডেমিকও হতে পারে, নন একাডেমিকও হতে পারে, দেখাটা দরকার। সুতরাং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক বা বৈশ্বিক মানদ- যদি বজায় না রাখে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণামূলকই হবে। শিক্ষার্থীদের বলছি, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসো, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ কর, কিন্তু মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের সেই কাক্সিক্ষত শিক্ষা, দক্ষতা দিতে পারছি না। তারা কর্মজগতে প্রবেশ করে দেখতে পাচ্ছে সেই কাক্সিক্ষত শিক্ষা, দক্ষতার অভাবে তারা অনুপুযুক্ত। এ কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, যেহেতু মানহীন শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার সামিল, সুতরাং সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে বাংলাদেশের একটি যুগান্তকারী অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। অ্যাক্রেডিটেশন ছাড়া শিক্ষার্থীরা চাকরি পাবে না। তিনি চাকরিদাতাদের চাহিদা অনুসারে যুগোপযোগী কারিক্যুলাম প্রণয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্য বিএসিকে পদক্ষেপ নিতে বলেন। এছাড়াও শুধু উচ্চতর ডিগ্রিসমূহই নয়, ডিপ্লোমা ডিগ্রিকেও অ্যাক্রেডিটেশনের আওতায় আনার জন্য তিনি বিএসিকে আহ্বান জানান।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, একটি দেশ ও একটি জাতি এগিয়ে যায় শিক্ষার ভিত্তিতে। বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতির ভিত্তি হলো শিক্ষা। এই শিক্ষার দুটো দিক রয়েছে; একটি হলো প্রাইমারি, যা শৈশব থেকে সেকেন্ডারি পর্যন্ত; অপরটি হলো উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জোর দিতে হলে ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট-এর ১৯৯৬ সালের একটি রিপোর্ট স্মরণযোগ্য। এই রিপোর্টে লেখা হয়েছে, শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হলে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেভেলে জোর দিতে হবে। অর্থাৎ লিটারেসি (ভাষা) ও নিউমারেসি (গণিত) এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। নিউমারেসির উপর জোর দিলে যে-অগ্রগতি হয়, তার উপর ভিত্তি করে একটি দেশের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান এগিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নত করার ক্ষেত্রে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অ্যাক্রিডেট করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খুবই জরুরি।
তিনি উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের মূল্যায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।
ড. অনুপম সেন আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও ভারতবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা তুলে ধরে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে অ্যাক্রিডেট করা হয় তা বর্ণনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সকলকে উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, বিএসি চট্টগ্রামে এই বার্তাই নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছেনা উল্লেখ করে তিনি কর্মশালায় অংশ নেওয়া সকলকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করবার আহ্বান জানান। কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী এবং প্রফেসর ড. এস এম কবীর কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কর্মশালা শেষে কাউন্সিল সচিব প্রফেসর একেএম মুনিরুল ইসলাম আগত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীসহ কর্মশালা আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত বিএসি ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সকলকে ধন্যবাদ জানান। কর্মশালায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ডিন, আইকিউএসি’র পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকগণ, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ ও বিভাগীয় প্রধানগণ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকসহ ১২টি সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষগণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালাটির আয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করেছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল। বিজ্ঞপ্তি