ভূঁইয়া নজরুল»
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত পলিথিনের স্তর। চট্টগ্রাম বন্দরের এক নম্বর ও দুই নম্বর জেটি প্রায় অকার্যকর এই পলিথিনের জন্য। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এপর্যন্ত প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা খরচ করা হলেও সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে নগরী। এখানেও পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য। পলিথিন সমস্যা নিরসনে গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে।
কিন্তু পলিথিনের এই সমস্যার সমাধান কোথায়? এই সমস্যার সমাধান হলো মানুষের সচেতনতা। সচেতনতাই পারে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে। এমনটাই মনে করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ( চট্টগ্রাম মহানগর) নুরুল্লাহ নূরী। তিনি বলেন, ‘আমরা পলিথিন তৈরির কারখানা বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করে আসছি এবং আগামীতেও করবো। কিন্তু মানুষের মধ্যে যদি নালা ও খালে পলিথিন নিক্ষেপের অভ্যাস বন্ধ না হয় তাহলে এসব পলিথিন ও প্লাস্টিকে নালা, খাল ও নদী ভরাট হবেই। এজন্য সবার আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, কর্ণফুলী নদীর ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত পলিথিনের স্তর। বর্ষার বৃষ্টিতে এসব পলিথিনের কারণে নালা ও খালগুলো দিয়ে পানি নামতে পারে না। এতে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে।
তবে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার বিকল্প নেই। এবিষয়ে তিনি বলেন, এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে থ্রি আর (রিডিউজ, রিইউস এবং রি সাইক্লিং) প্রকল্প চালু করেছিল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে এই পদ্ধতিতে শুরুতেই বর্জ্যকে পৃথকীকরণ করতে হবে। পরবর্তীতে এই বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা গেলে মানুষ যত্রতত্র ফেলবে না।
একই মত প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু এসব বর্জ্যকে উৎসে পৃথক করে বিক্রয়যোগ্য করা গেলে মানুষ আর বাইরে ফেলবে না। এজন্য গৃহ থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পুরো নগরীকে তিন বা চারটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এসব কোম্পানি বর্জ্যগুলোকে সম্পদে পরিণত করতে প্রকল্প গ্রহণ করবে।’
তিনি আরো বলেন, নদীগুলোতে পলিথিনের স্তর বেড়ে যাওয়ায় নদীর বাস্তুসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট হচ্ছে এবং ধংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
নালা ও খালগুলোতে কতো ধরনের বর্জ্য পাওয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, ‘মানুষের ঘরে যতো ধরনের বর্জ্য হয় সবই নিক্ষিপ্ত হয় নালা ও খালে। পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের পাশাপাশি ঘরের বালিস, মেট্রেসও ফেলা হয় নালায়। এর সাথে রয়েছে সোলা জাতীয় ককসিটগুলো।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জনিয়ারিং ব্রিগেড। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সেনবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘আমরা খালগুলো থেকে বর্জ্য পরিষ্কার করে যাবার কিছুদিন পর আবারো তা ভরাট হয়ে যায়। নালা ও খালপাড়ের মানুষকে বর্জ্য নিক্ষেপে সচেতন করা গেলে এবং তাদের কাছ থেকে সঠিক সময়ে বর্জ্য সংগ্রহ করা গেলে এসমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতো।’
গত শনিবার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন নালা ও খাল সরজমিনে দেখা যায়, সব জায়গায় পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যে ভরপুর। সিটি কর্পোরেশন ও সেনাবাহিনীর লোকজন নালা ও খালগুলো থেকে এসব পলিথিন ও প্লাস্টিক সংগ্রহ করে খালপাড়ে রেখেছে। কাপাসগোলা হিজরা খাল ব্রিজ, চকবাজার ধুনির পুলের কাছে চাক্তাই খালে, বহদ্দারহাট ডোমখালী খালে দেখা যায় পলিথিনের স্তুূপ।
এসব পলিথিন থেকে নগরবাসীকে উদ্ধারের জন্য মুখ্য সচিব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে প্রকল্প নিতে বলেছেন। এবিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পলিথিন অবশ্যই ক্ষতিকারক। কিন্তু মানুষ যাতে তা নালা ও খালে না ফেলে এজন্য আমরা জনসচেতনতা বাড়াতে এলাকায় এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করবো। নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। নালা ও খালগুলোর পানি এসব পলিথিনের কারণে আটকে যায়। এছাড়া কর্ণফুলীর নদীর নাব্যতাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এই পলিথিনের কারণে। ড্রেজার মেশিন দিয়েও পলিথিন উত্তোলন করা যাচ্ছে না।