নিজস্ব প্রতিবেদক »
আজ চট্টগ্রামে আসবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১১ বছর পর কোনো জনসভায় যোগ দিতে তিনি আসছেন। এ উপলক্ষে চট্টগ্রামজুড়ে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। লাখো মানুষ অপেক্ষা করছে এক পলক দেখার আশায়। পুরো নগরজুড়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা, রাতে করা হচ্ছে লাইটিং। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে। অন্যদিকে গতকাল বিকাল থেকে দক্ষিণ ও উত্তর চট্টগ্রাম থেকে মানুষ নগরমুখী হচ্ছে। নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নগরীর পলোগ্রাউন্ডে এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে সামরিক বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখান থেকে দুপুরে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে আসবেন। স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে করে প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় যোগ দেবেন।
তিনি চট্টগ্রামে সর্বশেষ জনসভায় এসেছিলেন ২০১২ সালের ২৮ মার্চ। সেদিন তিনি পলোগ্রাউন্ডে ১৪ দলের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। ১০ বছর ৯ মাস পর একই মাঠে আবার ভাষণ দেবেন তিনি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে জনসভার মাঠ পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী কাজ করেছেন। তাই এ জনসভায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ জনগণও উপস্থিত হবেন। এ জনসভা মানুষের উপস্থিতিতে অতীতের সকল রেকর্ডকে ভঙ্গ করবে। শনিবার বিকাল থেকে মানুষ নগরমুখী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবারের পলোগ্রাউন্ড জনসভা একটি ঐতিহাসিক জনসভায় রূপ নেবে।’
জনসভার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘দীর্ঘ ১১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের মানুষের কাছে আসছে। পলোগ্রাউন্ডে মহাসমাবেশ হবে, এ দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও পরম আনন্দের। এখানে ভাষণ দেবেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবেসে চট্টগ্রামের মানুষ আনন্দ উৎসব পালন করছে, নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ বাদ দিয়ে সমাবেশে ছুটে আসছে, এর চেয়ে বড় আনন্দের দিন আর কি হতে পারে।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘চার তারিখের জনসভাকে ঘিরে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ। চট্টগ্রামের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখতে, কাছাকাছি স্থান থেকে একটু কথা শুনতে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। ১৫ দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে চট্টগ্রামবাসী নানা আয়োজন, অনুষ্ঠান করেছে। আনন্দ উৎসব ও র্যালি বের করছে। আশা করি, এবার জনসভায় লোক জমায়েতে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। জনসভার বক্তব্য ও প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে মাঠের বাইরেও এলইডি টিভি বসানো হচ্ছে।’
জনসভায় যা উদ্বোধন করা হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরে ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এজন্য জনসভার মঞ্চের পাশে ভিত্তিফলকগুলো স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ড ময়দানে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে বক্তব্য দেবেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে তিনটি প্রকল্প। সেগুলো হলো ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, সন্দ্বীপ উপজেলার ৭২ নম্বর পোল্ডারের ভাঙন প্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্প ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি পোল্ডারের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে সীতাকু- টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফটিকছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাউজান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া কোতোয়ালী থানার দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার একটি ৬তলা ভবন এবং সীতাকু- টেকনিক্যাল স্কুলে একটি ৫তলা ভবন ও একটি ৪তলা প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ, একতলা সার্ভিস এরিয়া ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণসহ ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে কোতোয়ালী থানার গুল-এজার বেগম সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬তলা ভবন, কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬তলা ভবন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ১০তলা একাডেমিক ভবন, কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬তলা ভবন, পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬তলা ভবন, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট কেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, পাঁচলাইশ থানাধীন বন গবেষণাগার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬তলা ভবন, বোয়ালমারী উপজেলাধীন হাজী মোহাম্মদ জানে আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪তলা ভবন, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪তলা ভবন, সন্দ্বীপের সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন এবং ডবলমুরিং থানার সরকারি সিটি কলেজে ১০তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হবে।
এছাড়া উদ্বোধন করা হবে পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন সম্প্রসারণ, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের লালদিঘি মাঠের ৬ দফা মঞ্চ নির্মাণসহ সংস্কার কাজ এবং খুলশী থানার সিএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের সম্প্রসারণ কাজ।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে মিরসরাইয়ে হিংগুলি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং লোহাগড়ায় চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিটাক চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নারী হোস্টেল নির্মাণকাজও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে নাসিরাবাদ শিক্ষানবীশ প্রশিক্ষণ দপ্তর সংস্কার ও আধুনিকায়ন কাজ।
উদ্বোধনের তালিকায় থাকা অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ানহাটে হর্টিকালচার সেন্টারে একটি প্রশিক্ষণ ও অফিস, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (প্রতিটি ৫০০০ বিএইচপি/ ৭০ টন বোলার্ড পুল) টাগবোট সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্প ও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্প।
এসব প্রকল্পের বাইরে আরও চার প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো হচ্ছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ, আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামস্থ বিপিসি ভবন নির্মাণ কাজের।
এদিকে পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী জনসভার স্থলকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।