নিজস্ব প্রতিবেদক »
প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতনী সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। চট্টগ্রামে এবার ২৯৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বিষাদের সুরে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানালেন ভক্তেরা।
গতকাল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর প্রভাবে দিনভর বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরীর পতেঙ্গা, অভয়মিত্র ঘাট ও কালুরঘাটে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দশমীর দিন সকালে জেএম সেন হলসহ সকল মণ্ডপে পূজাতত্ত্ব আলোচনার পর দশমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুর্গা দেবীকে শেষবার দেখতে মণ্ডপে-মণ্ডপে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। কেউ পরিবার-পরিজন, কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে মণ্ডপে আসেন। একে অপরের গালে সিঁদুর দিয়ে, ঢাকের তালে তালে নেচে বিজয়া দশমী উদযাপন করেছেন তাঁরা।
এদিকে সকাল ১১টা ম-পগুলোতে থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। দুপুর আড়াই থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রে সৈকতে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। সরেজমিন দেখা যায়, তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টিমুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে পতেঙ্গা সৈকতে ভিড় করেছেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নানা ধর্মের, শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন এ অনুষ্ঠান হাজারও মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে নারী ও শিশুদের পানিতে নামতে দেওয়া হয়নি।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান। শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল পাদপীঠ হিসেবে চট্টগ্রামের যে ঐতিহ্য তা রক্ষা করতে হবে ভবিষ্যতেও।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করতে হবে সকলে মিলে। তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ এগিয়ে যাবে।
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী, নুরুল আমিন, আবদুস সালাম মাসুম, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, চসিক কর্মকর্তাবৃন্দ, পতেঙ্গা থানা পূজা উদযাপন পরিষদ ও চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমীর পূজা সম্পন্নের পর মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। বিজয়া দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা। হিন্দুদের মতে, দেবী দুর্গা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী। একইসঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’, ‘শক্তিরূপেণ’। ১৪ অক্টোবর মহালয়ার দিন সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের, আগামী ২৮ অক্টোবর কোজাগিরী পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দেবী পক্ষ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মহালয়ার দিনে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা সন্তানদের নিয়ে কৈলাশের স্বামীর ঘর থেকে মর্ত্যে যাত্রা শুরু করেন। আর বিজয়া দশমীতে ফিরে যান। শাস্ত্রীয় মতে এবার দেবী দুর্গা কৈলাশ থেকে স্ব-পরিবারে মর্ত্য লোকে এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে। আবার ফিরেও যাচ্ছেন ঘোড়ায়।