প্রকৃতি-পরিবেশ ক্ষতি করে কাসাভা চাষ নয়

আফ্রিকা মহাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কাসাভা খেয়ে জীবন ধারণ করে। তবে বাংলাদেশে এখনো এটি নিতান্তই অপরিচিত। গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদটি বাংলাদেশে চাষ না হলেও পাহাড়ে-জঙ্গলে দীর্ঘদিন থেকে এ গাছ জন্মায়। স্থানীয়ভাবে কাসাভার ব্যবহার আছে অনেক আগে থেকেই। গ্রামের মানুষ কাসাভার কন্দকে ‘শিমুল আলু’ বলে। গাছটির পাতা অনেকটা শিমুল গাছের মতো দেখতে বলেই হয়তো এরকম নামকরণ।
কাসাভা আটার পুষ্টিগুণ গমের আটার চেয়ে অনেক বেশি। এই আটা থেকে রুটি ছাড়াও অনেক প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। কাসাভা ভিটামিনের দিক দিয়েও শীর্ষে। কাসাভার খাদ্যমানের মধ্যে প্রোটিন আছে ১০ শতাংশেরও বেশি। অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কার্বোহাইড্রেট আছে যথাক্রমে ১০ ও ৩০ শতাংশ। আরো আছে ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা আলুতে রয়েছে ৩৭ গ্রাম শর্করা, ১.২ গ্রাম আমিষ, ০.৩ গ্রাম চর্বি, ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ০.০৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১৪৬ ক্যালরি খাদ্যশক্তি।
সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে কাসাভা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতিমধ্যে বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাসাভা থেকে আটা ও স্টার্চ তৈরি করে বাজারজাতকরণের উদ্যোগও নিয়েছে।
তবে মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা পাহাড়ে কাসাভা চাষকে ক্ষতিকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পার্বত্য এলাকায় ঠেংগা আলু নামে অধিক পরিচিত কাসাভা বা শিমুল আলুর চাষাবাদ শুরু হয় ১৫–২০ বছর আগে। প্রথম দিকে সীমিত আকারে চাষ হলেও দিন দিন ব্যাপক হারে হচ্ছে কাসাভার চাষ।
পাহাড়ে যে পদ্ধতিতে কাসাভার চাষ হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। কাসাভার গাছের মূলই আলু হিসাবে ব্যবহার হয়। মাটির অনেক গভীরে থাকা এ মূল তোলার জন্য টিলার মাটি কোদাল দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়। এভাবে এলোপাথাড়ি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পুরো টিলার মাটিই আলগা হয়ে পড়ে। বর্ষার সময় অল্প বৃষ্টি হলে সহজেই ধসে পড়ে টিলাগুলোর মাটি। এছাড়া ভূমির উপরিভাগে থাকা মাটির উর্বর উপাদান বা টপ সয়েলও ধসে যায়। ফলে টিলাগুলো হয়ে পড়ে অনুর্বর। তিনি বলেন, এক ইঞ্চি উর্বর মাটি বা টপ সয়েল সৃষ্টি হতে একশ বছরের মতো সময় লেগে যায়। অথচ এ মূল্যবান উপাদানই নষ্ট করা হচ্ছে কাসাভা চাষের কারণে। এভাবে মাটি উপড়ে আলু তোলার কারণে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির স্রোতে টিলাগুলোতে মাটি ধস হয়।
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কাসাভার উৎপাদন বাড়ুক তবে তা প্রকৃতি ও পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়।