উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মেয়াদ বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ব্যয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরণের প্রবণতার কারণ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্প সংশোধন আর টাকা বাড়ানো-এই ধারা বন্ধ করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত দেন। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠক শেষে প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এসব পর্যালোচনার কথা সাংবাদিকদের অবহিত করেন। ‘কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ’ এবং ‘চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ’ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী উপরোক্ত অভিমত দেন। ভবিষ্যতে এভাবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলেও সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দেন তিনি।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি দেখিয়ে বাড়তি ব্যয় জনিত প্রকল্প সংশোধন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একটি স্বাভাবিক প্রবণতায় দাঁড়িয়েছে। এর ফলে জনগণের অর্থের অপচয় ঘটে ব্যাপকভাবে। সরকারি অর্থের নয়-ছয় হয় এবং যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়াতে জনগণ প্রকল্প থেকে উপযোগিতাও সঠিকভাবে পায় না। প্রথম প্রকল্পটি দুই বছর সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা, দু’বছর অতিবাহিত হয়ে গেলে আরও ২ বছর সময় চাওয়া হয়েছে। তাহলে এই ২ বছরে কত শতাংশ কাজ হয়েছে! ৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প এখন ১১০ কোটি টাকায় দাঁড়ালো। আমাদের দেশে প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা সাতকাহন প্রতিনিয়তই পত্রিকায় বের হয়ে থাকে।
প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় সমালোচনার জন্ম দেয়। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। প্রশাসনিক দক্ষতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। আমরা কিছু প্রকল্পে পর্দা কা-, বালিশ কা-ের কথা জানি। অহেতুক বিদেশ ভ্রমণের জন্য প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়। সেমিনার, প্রশিক্ষণ এসব নিয়েও অহেতুক ব্যয় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়। ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্প নিয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ নেয়ার বিষয়ও ইতিপূর্বে সমালোচিত হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি এবং নানা অনিয়ম বিদেশে দুর্নীতির ফলে দাতা দেশগুলির অসন্তোষ বাড়ে ফলে বরাদ্দ পেতেও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। যথাসময়ে প্রকল্প শেষ না হওয়ার কারণ, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রকল্প পরিদর্শন নিয়মিত না করা, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহির আওতায় না আনা, সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান না করে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেলে রাখা-এসব বিষয় উল্লেখ করা যায়। পরিকল্পনা কমিশনের উচিত প্রকল্পের মূল্যায়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে সকল বিষয়াদি সুষ্ঠুভাবে এগিয়েছে কিনা তা তদারক করা। প্রকল্পের অহেতুক ব্যয় বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করে জনগণের অর্থের সাশ্রয় ঘটাতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জট পরিহার করতে হবে। সমস্যার উদ্ভব হলে দ্রুত তার সমাধান এবং সকল পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই অনিয়ম-দুর্নীতি কমবে।
মতামত সম্পাদকীয়