রইখাল খনন ও কুলগাঁও বাস টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনকালে সুজন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন গতকাল সকালে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে বাস্তবায়নাধীন বাড়ইপাড়া খাল খনন ও কুলগাঁও বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে বলেন, প্রকল্প দুটি নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখবে। নাগরিক দুর্ভোগের প্রধান কারণ জলাবদ্ধতা ও যানজট। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ দুটি সমস্যা নিরসনের অংশ হিসেবে চসিক নগরীর বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া হতে পূর্ব বাকলিয়ার বলিরহাট পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প ও কুলগাঁওয়ে বালুছড়ায় বাস টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল বাধা অতিক্রম করে এখন স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রাপ্তিযোগ ঘটাতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের নগরী হিসেবে গড়ে উঠতে প্রাকৃতিক বন্দরসহ সকল উপাদান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম তা হতে পারেনি। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এক সময়ের ছোট-খাট সমস্যাগুলো এখন আমাদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বড় প্রমাণ জলাবদ্ধতা ও যানজট। চাক্তাই খাল দখল এবং প্রায় দু’ডজন খাল বিলুপ্তি নগরীতে জলাবদ্ধতার মূল উৎস। পণ্য ও গণপরিবহনের জন্য বড় টার্মিনাল না থাকায় যেখানে সেখানে অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ডগুলো যানজট সমস্যাকে অনিবার্য করে তুলেছে। তাই এ দুটি সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত এ প্রকল্পগুলো আর কালবিলম্ব না করে দ্রুত বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
প্রশাসক আরও উল্লেখ করেন, এ দুটি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নগরীতে জলাবদ্ধতা ও যানজট সংকট নিরসনের সবুজ সংকেত। তিনি পূর্ব বাকলিয়া বলিরহাটে জাইকার অধীনে ১৩’শ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ইখাল খনন প্রকল্পটির বিবরণী তুলে ধরে জানান, ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালটি সরাসরি চাক্তাই খালের সাথে যুক্ত হবে এবং ওই খাল হয়ে পানি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির প্রশস্থ ৬৫টি ফুট। উভয়পাশে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ২০ ফুট প্রশস্থ সড়ক ও ৬ ফুট প্রশস্থ ওয়াকওয়ে। গত ৬ বছর ধরে বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ ঝুলেছিল। মূলত ভূমি অধিগ্রহণের দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ফিজিক্যাল ওয়ার্ক শুরু করতে পেরেছি। চসিকের প্রকৌশল ও ভূসম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দুটির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি কুলগাঁও বালুছড়ায় ৮.১ একর জায়গার ওপর চসিকের উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন বাস টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে জানান, এ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোপূর্বে চসিক ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগকে ১৩০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। এ প্রক্রিয়াটি করোনাকালে কিছুটা গতি হারালেও এখন গতি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের অনুরোধ করেছি অধিগ্রহণ ও অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে তারা যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাগিদ প্রদান করে আসছি। এ ক্ষেত্রে আর কোন সময়ক্ষেপণ করা হবে না। অধিগ্রহণ কাজ সমাপ্ত হলে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উত্তর চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি আন্তঃজেলা সড়কে বিদ্যমান যানজট সমস্যা আর থাকবে না। খুব সহজেই এ বাস টার্মিনাল থেকে পরিবহন মালিক, চালক, শ্রমিক এবং যাত্রীসাধারণ বিড়ম্বনামুক্ত আরামদায়ক সেবা পাবেন।
এ সময় প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম, আবু ছালেহ, নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, আবু ছিদ্দিক, শাহিনুল ইসলাম, এস্টেট অফিসার মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী, জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল কালাম, প্রকৌশলী মফিজুল ইসলামসহ চসিকের প্রকৌশলী ও পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি