দেশের অধিকাংশ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ম ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। ৬ষ্ঠ ধাপের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনে অনিয়ম সহিংসতা সত্ত্বেও ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় পঞ্চম ধাপে ভোট পড়েছে ৫৮.৬৭ শতাংশ। অন্যান্য ধাপে ভোট পড়ার হার ৬০ শতাংশের বেশি। বিভিন্ন ধাপে ভোট পড়ার গড় হার ৬৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমএ ভোটও হয়েছে অধিকাংশ কেন্দ্রে। ভোট পড়ার হারে বুঝা যায় ইভিএম এ অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন ভোটাররা। ভোটার উপস্থিতি বাড়ায় নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্টি বোধ করলেও বিভিন্ন ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা, অনিয়মও হয়েছে। গণমাধ্যমে এসবের বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন আইন প্রয়োগে কঠোর হলে, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো। বিভিন্ন ধাপের নির্বাচনী প্রচারে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রাণহানি ঘটেছে। ভোটের দিনও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে নির্বাচনী এরিয়ার বাইরে এ সকল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকলে এসব ঘটনা প্রতিরোধ করা অসম্ভব কিছু ছিল না।
নির্বাচনে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা এবং নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছেÑ এমন অভিযোগ এনে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সামনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বেশ কিছু ঘটনাও আছে যা গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য শুভ নয়। এ ধরণের বিষয় নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত। কোনো দলের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ থাকলে যথাসময়ে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয় কিন্তু নির্বাচন এলে কর্মি সমর্থকদের ঢালাওভাবে আটক, বাড়ি তল্লাশি অভিপ্রেত নয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ ধরণের অভিযোগ প্রতিটি নির্বাচনের সময় করেছে।
পৌরসভা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের অনেকেও বিদ্রোহী প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এতে সহিংসতা বেড়েছে। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিবাদ বেড়েছে। এই বিবাদ নির্বাচনের পূর্বাপর সমাজেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে, এতে সমাজ বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। এর প্রভাবে রাজনৈতিক দলগুলিতেও বিভক্তি, দলীয় কোন্দল চরম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আগে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় ইস্যু, প্রার্থীদের যোগ্যতা, মেধা যাচাই করার সুযোগ ছিল এখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় দলীয় আনুগত্য-সমর্থন, প্রভাব বিবেচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয় নিয়ে জাতীয়ভাবে আলোচনা পর্র্যালোচনা প্রয়োজন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অধিকাংশ পৌরসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। নাগরিক সেবার দিকটি যাতে ব্যক্তিÑগোষ্ঠী স্বার্থে উপেক্ষিত না হয় সে জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সমর্থক নির্বাচিতদের কাজকর্মের প্রতি নজরদারি রাখা প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধিদের কিছু অংশ নানা অপরাধেও যুক্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে ক্ষমতার অহংকারে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন-এসব বিষয় পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত আসে।
গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের অংশ হিসেবে নির্বাচনকে দেখা উচিত। যে কোন অবস্থায় সকল পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ জনমত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিচায়ক। যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে সহিংসতা, অনিয়ম ও প্রার্থীদের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জনগণের মধ্যে নিজেদের অধিকার প্রকাশে উৎসাহ বাড়ে, এতে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রশাসনে জনগণের সম্পৃক্ততা নিবিড় হয়।
মতামত সম্পাদকীয়