বাংলাদেশের ১৪৩টি কারখানা পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল থেকে। এর মধ্যে ৪১টি কারখানা লিড প্লাটিনাম পেয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রকাশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটাগরিতে বিশ্বের ১০০টি সেরা কোম্পানির ৩৯টিই বাংলাদেশের। ১৪৩টি কারখানার মধ্যে ১৬টি চট্টগ্রামের। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ৫০০টি কারখানা সার্টিফিকেশন এর অপেক্ষায় আছে। গত শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। নয়টি শর্ত পরিপালনের ওপর ভিত্তি করে ৩ ক্যাটাগরিতে সনদ দেয় সংস্থাটি। তৈরি পোশাক শিল্পে ১০ বছরে পরিবর্তন নিয়ে ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের দেড় হাজারের বেশি কোম্পানির ‘গ্লোবাল’ অর্গানিক টেক্সটাইল সনদ রয়েছে, যা বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। ইতিপূর্বে হংকং ভিত্তিক আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘কিউ আই এম এ’ এর প্রতিবেদনে এথিক্যাল সোর্সিং এর দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
গত ১০ বছরে পোশাক শিল্পে পরিবেশ, শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয় প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার সাধন করা হয়েছে এবং কর্ম পরিবেশের উন্নতি সাধিত হয়েছে। তার ফলেই এই বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশীয় উদ্যোক্তা, সরকার ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ২টি জোট পরিবেশ ও নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করেছে।
বিশ্বস্বীকৃতি এমন একটি সময়ে এসেছে যখন করোনা পরিস্থিতিতে এ শিল্প এক সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। এ প্রতিকূল সময়েও গার্মেন্টস শিল্পে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে, শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সচেতন দৃষ্টি রয়েছে, তাছাড়া করোনার সময়ে সরকারি প্রণোদনা এ শিল্পে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে। আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে, তদুপরি কর্মসংস্থানের দিক থেকে বেশি সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরও অনেক সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনীতিকে গতি দিচ্ছে।
পোশাক শিল্প কারখানা নিয়ে বিশ্বস্বীকৃতি ক্রেতাসাধারণের আস্থা বাড়াবে, তাদের সাথে মূল্য নিয়ে দর কষাকষিতেও বাংলাদেশ সুবিধাজনক স্থানে থাকবে। চট্টগ্রামের কয়েকটি কারখানা পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি লাভ করায় ভবিষ্যতে এখানে এ শিল্পের উন্নতিতে প্রভাব পড়বে। চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পের কারখানাগুলির ঢাকার মতো স্থানীয়করণ অপরিহার্য, নগরীর বিভিন্ন স্থানে কারখানাগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, পৃথক শিল্প পল্লী, অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা প্রতিষ্ঠা বা স্থানান্তর প্রয়োজন। নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতি উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে। এক তথ্যে জানা গেল, চলতি অর্থ বছরে নিট ও ওভেন মিলিয়ে ২ হাজার ৮৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে পোশাকশিল্প। প্রতিটি কারখানায় প্রাথমিক নিরাপত্তা সুরক্ষা সরঞ্জাম, সংযোজন, শ্রমিকদের দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে হবে।
আমরা মনে করি, পোশাক শিল্পে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে, প্রথমে বিনিয়োগ বেশি হলেও পরবর্তীতে তা সুফল দিতে শুরু করবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে তা সমৃদ্ধ করবে।
মতামত সম্পাদকীয়