পোশাক রফতানিকারকদের বেড়েছে শিপমেন্ট খরচ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দেশের পোশাক রফতানিকারকদের পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে ক্রেতার কাছে নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছাতেই ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যয়বহুল এয়ার ফ্রেইট। এতে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও কারফিউর কারণে উৎপাদন ও শিপমেন্টে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে কমে এসেছে লিড টাইম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অত্যধিক কনটেইনার যানজটের কারণে বিমান ও সমুদ্র পথে উভয়ই ক্ষেত্রে একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিছু ক্রেতারা লিড টাইম সাতদিন পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ালেও এ সময়ের মধ্যে পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছাতেই প্রায় অসম্ভব।
শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা আরও বলেছেন, যে ঢাকা থেকে ইউরোপে প্রতি কিলোগ্রাম এয়ার ফ্রেইট খরচ ৬ ডলার। মাত্র পাঁচ মাস আগে প্রতি কিলোগ্রাম এয়ারফ্রেড খরচ ছিল ২ ডলার। একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালানের জন্য এয়ার ফ্রেইট খরচ ৭.৫ থেকে ৮ ডলার, যা ডিসেম্বর মাসে ছিল ৩ ডলার। তারা বলেছেন, ঢাকা বিমানবন্দর এরই মধ্যেই প্রচুর কার্গো পণ্যের কারণে ওভারলোড হয়ে গেছে। কার্গো ফ্লাইটের অভাবের কারণে কিছু পণ্য কার্গো এলাকার বাইরে সংরক্ষণ করতে হয়েছে। কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ এইচ এম মুস্তাফিজ বলেন, কানাডিয়ান ক্রেতার পাঠানো একটি ছোট চালান ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কারখানাটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, ক্রেতা এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পণ্য পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। কানাডিয়ান ক্রেতার সঙ্গে আমাদের কথোপকথন অনুসারে, তারা দুই সপ্তাহের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে। অন্যথায়, আমাদের ব্যয়বহুল বিমান চালানের সম্মুখীন হতে হবে।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, গত ১৫ দিন ধরে আমার পণ্য খালাসের জন্য আমি ঢাকা বিমানবন্দরে যাচ্ছি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় বিপুল সংখ্যক পণ্যের স্তূপ দেখেছি, ট্রাকের দীর্ঘ লাইন অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টদের সাম্প্রতিক ধর্মঘট বিমানবন্দরের কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে এবং কারফিউ চলাকালীন এয়ারলাইনগুলোরও কার্যক্রম স্থগিত করেছে। শোভন ইসলাম বলেন, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রফতানি পণ্য পাঠাতে এখন সাতদিন সময় লাগে এবং অভ্যন্তরীণ পণ্য খালাস হতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগে। ফলে এখন খোলা জায়গায় এমনকি রাস্তায় মালামাল জমে আছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, কার্গো এলাকায় জায়গার অভাব এবং কার্গো এয়ারলাইন্সের ঘাটতিসহ একাধিক কারণে পণ্য জমেছে। পোশাক প্রস্তুতকারীরা ডিসেম্বরের শেষ থেকে সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রচুর চাপের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ঢাকা বিমানবন্দরে রফতানি পণ্যের বোঝা অনেক বেড়েছে। উপরন্তু, বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা চাপা পড়ে গেছে। তুর্কি, এমিরেটস, কাতার এবং সৌদিয়ার মতো এয়ার মালবাহী বিমান বাংলাদেশে তাদের কার্গো অপারেশন কমিয়ে দিয়েছে। খবর ডেইলি বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ডেডিকেটেড কার্গো ফ্লাইটের অনুপস্থিতিতে আমরা প্রায়ই যাত্রী ফ্লাইটের উপর নির্ভর করছি। টুসুকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরশাদ জামাল বলেন, ভারতের চেয়ে বেশি খরচ দিলেও ঢাকা থেকে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন। ক্রেতাদের লিড টাইম মেটাতে গ্রুপটি তাদের নিজস্ব খরচে ৮০ হাজার পিস গার্মেন্টস এয়ার ফ্রেডের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠিয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৩.২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ, একটি নেতৃস্থানীয় পোশাক রফতানিকারক, সম্প্রতি সমুদ্র পরিবহনের মাধ্যমে তাদের পণ্য দুবাইয়ে পাঠিয়েছে। তারপর লিড টাইম পূরণের জন্য সেখান থেকে বিমান পরিবহন ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা বিমানবন্দরে কনটেইনার যানজটের কারণে রফতানিকারকরা এই পথ বেছে নিয়েছেন।