রুশো মাহমুদ »
দেশের বনেদি ক্লাবগুলোর একটি চট্টগ্রাম ক্লাব। বয়স প্রায় দেড়’শ বছরের কাছাকাছি। ব্রিটিশ শাসনামলে সামাজিক ক্লাব হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ক্লাব নিজস্ব আইনকানুন মেনে পরিচালিত হয়। এজন্য আছে মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন। মেম্বারদের নিয়ন্ত্রণে আছে ক্লাবের বাই-লজ। বাই-লজে ড্রেস কোড নির্ধারিত আছে। সেটি মেনেই ক্লাবে আসতে হয়।
ক্লাবের ভেতরে অনেকসময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সেগুলো খুব একটা প্রকাশ পায়না। কোন মেম্বার অঘটন ঘটালে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাকে শোকজ করে। বড় ধরনের ঘটনায় জড়ালে স্থায়ী বহিষ্কারও করা হয়। তবে থানা-পুলিশ পর্যন্ত এসব গড়ায় না। কারণ ক্লাব মেম্বারদের সামাজিক মর্যাদা এর সঙ্গে জড়িত।
নিজেদের বিষয়ে ক্লাব ষোল আনা সচেতন হলেও, অন্যের সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় সামান্যতম উদারতাও দেখাতে পারে না। অভিযোগ আছে, কয়েক বছর আগে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দেশের স্বনামধন্য একটি শিল্পগ্রুপের চেয়ারম্যান, সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ তিনি। পাঞ্জাবি পরে আসায় তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
গেল বছরও ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাঞ্জাবি পরায় একজন ব্যবসায়ীকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। ক্লাব কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে রীতিমতো বিব্রত অনুষ্ঠান আয়োজকেরা।
এধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে ক্লাবে। একান-ওকান হয়ে দু’একটি ঘটনাই কেবল প্রকাশ পায়। মান-মর্যাদার কথা ভেবে ভুক্তভোগীরা পারতপক্ষে গোপনই রাখছেন বিষয়টি।
ক্লাব মেম্বারদের ক্ষেত্রে না হয় ড্রেস কোড মানার বাধ্যবাধকতা আছে বুঝলাম। কিন্তু তাই বলে দাওয়াত দিয়ে আনা অতিথিদের পোশাক নিয়ে কেন টানাটানি। বিষয়টা মোটেও শোভন নয়।
ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলে আসা রীতি এখনো কেন মানতে হবে। গোলামির জিঞ্জির থেকে বেরিয়ে আসা স্বাধীন এক দেশ বাংলাদেশ। কেন ব্রিটিশ সাহেবদের পোশাকে বাবু হয়ে এখনো কেন চলতে হবে। একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, নেটিভদের একসেস না দেয়ার জন্যই ড্রেস কোডের এই রীতি ঢোকানো হয়েছিলো ক্লাব কালচারে।
দেশের আরেক বনেদি ক্লাব ঢাকা ক্লাব ড্রেস কোডের ঔপনিবেশিক বিধি-বিধান শিথিল করেছে অনেক আগে। এক্ষেত্রে পাইওনিয়র হিলের চট্টগ্রাম ক্লাব পাইওনিয়র হতে পারতো। ক্লাবের গঠনতন্ত্র তো বাইবেল নয়। আফসোস, নেতৃত্বের গোঁয়ার গোবিন্দ ভূমিকায় মর্যাদাহানিকর ড্রেস কোডে আটকে আছে চট্টগ্রাম ক্লাব।
পোশাকের স্বাধীনতা প্রত্যেকের আছে। সমাজ-সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরিধান করাই ভালো। পোশাকের স্বাধীনতার কথা আমাদের সংবিধানেই আছে। এক্ষেত্রে অশ্লীল ও দৃষ্টিকটু পোশাক না পরলেই হলো। এ অধিকারে কেউ যদি হস্তক্ষেপ করে তাহলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উচিত হবে হস্তক্ষেপকারীকে বিচারের আওতায় আনা।
এ মুহূর্তের সংবাদ