রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই–ডিসেম্বরে ২ হাজার ৩৩৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। দেশের অন্যতম রপ্তানি খাত হিসেবে পোশাকশিল্প চীন, ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এতদিন নিজের অবস্থান তুলে ধরলেও করোনা মহামারির পর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় সংকটে পড়ে যায় এ শিল্প। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য খরচ বেড়েছে পরিবহন ও মজুরি খাতে। এ সংকট মোকাবেলা করে টিকে থাকা পোশাক কারখানার মালিকরা আবার এ খাতে সুদিন ফেরার আশা করছেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ৬ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আয় এসেছে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি ডলার। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে চলতি মাসসহ আগামী পাঁচ মাসে অর্জন করতে হবে ৩ হাজার ৩৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রতিমাসে ৬৭২ দশমিক ৮ কোটি ডলারের লক্ষ্যপূরণ করতে হবে। গত এক বছরে তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে বিক্রি ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এ বিক্রি ২০২৩ সালের জানুয়ারির মাসিক ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে নভেম্বরে ২১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন দোকানগুলোতে মাসিক বিক্রি হয়েছিল আনুমানিক ২৯ বিলিয়ন ডলার যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। এ বিক্রির প্রবৃদ্ধি গড়ে তিন শতাংশ করে বাড়লেও চলতি মাস থেকে ৪ শতাংশ করে বাড়বে বলে জানিয়েছেন পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ীরা।
ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দেশগুলোতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এছাড়া অনলাইনে নতুন বাজারও তৈরি হচ্ছে। এর ফলে দেশের পোশাক শিল্প খাত পুনরুজ্জীবিত হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিজিএমইএ-এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসলের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) একটি গবেষণা করা হয়েছে।
এ গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন পোশাক বাজারের শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ ও আফ্রিকায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ পেতে পারে বাংলাদেশ। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কার্যাদেশ কম ছিল। যেহেতু কার্যাদেশ এখন বাড়ছে, আশা করা যায় আগামী এপ্রিল বা মে মাসের দিকে এটি আরও বাড়বে। রপ্তানি আগের মতো চাঙা হবে।
পোশালখাত আবার চাঙা হবে এটা সুখবর বটে তবে বিগত সময়ের সংকট আমাদের আবারও সতর্ক করলো যে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুধু পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভর করে চলা যাবে না। আমাদের বিকল্পও ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বহুবার এ বিষয় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শকে অবশ্য গ্রাহ্য করা উচিত। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আর পোশাকশিল্পের আয়ের ওপর ভরসা করে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি চলতে পারে না। দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নতুন নতুন রপ্তানি পণ্যেরও অনুসন্ধান করতে হবে।
মতামত