সুপ্রভাত রির্পোট »
দেশের তিন সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাসহ মোট ছয়টি বন্দরকে ‘পোর্ট অব কল’ হিসাবে ভুটানকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভুটানের পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পয়েন্টও বাড়ছে।
এসব বন্দর ও পয়েন্টকে অন্তর্ভুক্ত করে এ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সংশোধনে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভুটান। বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির (জেটিসি) বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ‘ইউজ অব ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ফর ট্রান্সপোর্টেশন অব বাইলেটারাল ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট কার্গোস’র অধীনে এসওপি রয়েছে। এতে শুধু নারায়ণগঞ্জ বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসাবে উল্লেখ রয়েছে। এসব বন্দর ‘পোর্ট অব কল’ স্বীকৃতি পেলে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে ভুটান। নিয়ম অনুযায়ী, শুধু পোর্ট অব কলভুক্ত বন্দরগুলোতে পণ্য ওঠানামার অনুমোদন দেওয়া হয়। যদিও দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি নৌপথ নেই। ভুটান থেকে সীমিত আকারে পণ্য ভারত হয়ে নৌপথে বাংলাদেশে আমদানি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ভুটান সফরকালে দুই দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহণ ও ট্রানজিট সংক্রান্ত এমওইউ স্বাক্ষর হয়। ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল এই এমওইউ’র আওতায় এসওপি স্বাক্ষর হয়। তবে এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বন্দরে একটিমাত্র জাহাজ ভুটানের পাথর নিয়ে এসেছে।
ভারতীয় নৌযান এমভি এএআই নামের ওই জাহাজটি ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরী থেকে নৌপথে ভুটানের এক হাজার ৫ টন পাথর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আসে। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় ১৯টি জাহাজে ভুটানের পণ্য বাংলাদেশে এসেছে। ভুটানের পণ্য ভারতের ধুবরী থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে আসে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নৌপ্রটোকল চুক্তিতে তৃতীয় দেশের পণ্য পরিবহণের সুযোগ রয়েছে।
এসপিওতে ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যকার দুটি নৌপথ রয়েছে। দুটি নৌপথের শেষ প্রান্ত ভারতের মধ্যে পড়েছে। ভুটানের সঙ্গে সরাসরি নৌপথ না থাকায় ভারত থেকে সড়কপথে পণ্য ভুটানে পরিবহণ করা হয়। রুট দুটি হচ্ছে- চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, মাওয়া, আরিচা, সিরাজগঞ্জ, চিলমারী-দৈখাওয়া হয়ে ভারতের ধুবরী। অপরটি হচ্ছে- মংলা-কাউখালী, বরিশাল, চাঁদপুর, মাওয়া, আরিচা, সিরাজগঞ্জ, চিলমারী ও দৈখাওয়া হয়ে ভারতের ধুবরী। দুটি নৌপথেরই একমাত্র পোর্ট অব কল ছিল নারায়ণগঞ্জ বন্দর। ভুটান সরকার আরও ৯টি বন্দরকে ‘পোর্ট অব কল’ভুক্ত করার অনুরোধ জানান। সেগুলো হচ্ছে- চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ, আরিচা, মাওয়া, চাঁদপুর, মোংলা, চট্টগ্রাম ও পায়রা পোর্ট। তবে বাংলাদেশ তার তিন সমুদ্রবন্দরসহ মোট ৬টি বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসাবে দেওয়ার কথা বলেছে। সেগুলো হচ্ছে- চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ, মোংলা, চট্টগ্রাম ও পায়রা পোর্ট। এসব বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে কম দামে ও কম যাতায়াত খরচে ভুটান থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। একই সঙ্গে বন্দর ব্যবহারের ফিও পাওয়া যাবে।
তিনটি সমুদ্রবন্দর পোর্ট অব কল হিসাবে ঘোষণা করা হলে ভুটান তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পণ্য এসব বন্দরে আমদানি করতে পারবে। সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথে নিজ দেশে নিতে পারবে। ভুটান ১৪টি পয়েন্টকে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পয়েন্ট হিসাবে স্বীকৃতি চাইলেও এক্ষেত্রে ৫-৬টিকে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পয়েন্ট হিসাবে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-দৈখাওয়া, চিলমারী, মোংলা বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর ও পায়রাবন্দর। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় শুধু মোংলা বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসাবে উল্লেখ রয়েছে।