নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া »
কক্সবাজারের পেকুয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজম খানের নেতৃতে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ছিরাদিয়ায় প্রবাহমান খালে কয়েকটি অবৈধ বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের করার প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মইয়াদিয়া স্টেশনে এই মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়। ওই মানববন্ধনে শতশত নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধন থেকে প্রবাহমান খালে অবৈধভাবে দেওয়া বাঁধগুলো কেটে দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবী জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধগুলো কেটে দেওয়া না হলে তারা নতুন আন্দোলনের কর্মসূচী দিয়ে রাস্তায় নামবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বিলাহাছুরা ছিরাদিয়া এলাকার ‘মানার বাপের খাল’ নামের প্রবাহমান খালটি প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা।
এটি একটি সরকারী খাল। এই খাল দিয়ে বর্ষায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বৃষ্টি ও বন্যার পানি সমুদ্র চ্যানেল কাটা ফাড়ি হয়ে সমুদ্রের দিকে বের হয়ে যায়। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজম খান এর নেতৃত্বে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই প্রবাহমান খালে কয়েকটি অবৈধ বাঁধ দিয়ে বেশ কয়েকটি মৎস্য ঘের বানিয়েছে।
খালের অবৈধ বাঁধের কারণে ওই খাল দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে গত কয়েক বছর পেকুয়া সদর ইউনিয়নে বর্ষার সময় বৃষ্টি ও বন্যার পানি বের হতে না পেরে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দেয়। ওই সময়ে কৃষকের আমন চাষ, গ্রামীন অবকাঠামো ও ঘরবাড়ির ব্যাপাক ক্ষতিসহ পেকুয়া সদর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মইয়াদিয়া এলাকার কৃষক ফিরোজ আহমদ জানান, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজম খান কর্তৃক দেওয়া ওই অবৈধ বাঁধগুলো কেটে দিয়ে প্রবাহমান খালটি খুলে দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথক পৃথক ভাবে সংশ্লিষ্টরা সরজমিনে গিয়ে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় গত বছর এই খালের অবৈধবাঁধ গুলো কেটে দেওয়ার জন্য পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি আদেশও দিয়েছিলেন।
কিন্তু রহস্যজনক ভাবে অবৈধ বাঁধ গুলো এখনও কেটে দেওয়া হয়নি। এতে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উৎসাহিত হয়ে এ বছর অবৈধ বাঁধ গুলোতে মাটি দিয়ে আরও উচু ও শক্ত করে নির্মাণ করে নোনা ঢুকিয়ে মৎস্য শুরু করে দিয়েছে। অবৈধ মৎস্য ঘেরের নোনা পানির কারণে পুরো এলাকায় এখন দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। গবাদি পশু, পাখি, হাসমুরগি পানি খাওয়ার সুপেয় পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। গাছ পালাও বিবর্ণ হয়ে গেছে। এতে পুরো এলাকা দুষিত হয়ে পড়েছে।
বাধগুলো এখনই কেটে দেওয়া না হলে আগামী বর্ষায়ও অন্য বছরের ন্যায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নে প্রবল বন্যা দেখা দেওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকার শতশত নারী পুরুষ বিলাহাছুরার মইয়া দিয়া স্টেশনে বাধগুলো কেটে দেয়ার দাবীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মানববন্ধন করেছেন। ওই বাঁধগুলো নিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
অভিযুক্ত আজম খান খালে বাঁধ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন ওই খাল দিয়ে এখন আর পানি বের হয়না। তিনি বলেছেন ওই মৎস্য ঘেরগুলোতে আমি একা নয়, অনেকই আছেন। তারা এই মৎস্য ঘের দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা জানান; আমি বুধবার বিকালে ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে দেখেছি। আমি তাদেরকে আসতে বলছে। চলাচলে খাল উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।