পেকুয়ায় সংঘর্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ, আহত ২০ পরিস্থিতি থমথমে

বাজারে আধিপত্য বিস্তারের জের

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া »

পেকুয়ায় সিএনজি অটোরিকশা স্টেশন দখল বেদখলের আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের দুপক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ঘটনায় ১৫-২০ জন শ্রমিক আহত হয়। আহতদের মধ্যে পথচারীও রয়েছে। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে থানা পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ৩ টায় পেকুয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধরা হলেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনা এলাকার বদিউল আলমের ছেলে আবদুল কুদ্দুস মনু (৪০), পুর্ব গোঁয়াখালী এলাকার গিয়াস উদ্দিন এর ছেলে নয়ন (২৩), আন্নর আলী মাতবর পাড়া এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে নেজাম উদ্দিন (৪৫), একই এলাকার শওকত হোসেন। বাকীদের (২২) নাম জানা যায়নি।
আহতরা হলেন, মিয়াপাড়া এলাকার নুরুল হোসেন এর ছেলে মোজাম্মেল, পুর্ব গোঁয়াখালী এলাকার আনছার উদ্দিনের ছেলে আতিক আহমদ, বারবাকিয়া পূর্ব জালিয়াখালি মোহাম্মদ সেকান্দর ছেলে মোক্তার আহমদ,আবুল বশরের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ,বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধামাঝির ঘোনা এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, পশ্চিম বারবাকিয়া এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে জাহেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাজেম উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ রুবেল ,শফিউল্লাহ ছেলে মোরশেদ, মোহাম্মদ আলমের ছেলে তাউসিফ, আব্দুল মোনাফের ছেলে মোহাম্মদ রাজিব, আক্কাস উদ্দিনের ছেলে মিনহাজ, আলতাসের ছেলে বাবু, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ হালু(২৫) এবং মৃত মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে জিয়াবুল(১৮)।
জানা গেছে, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠন নিয়ে পেকুয়ায় দুটি গ্রুপের মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। আধিপত্য বিস্তার ও টিকিট কাউন্টার দখল বেদখল নিয়ে তাদের এ বিরোধ। কক্সবাজার জেলা অটোরিকশা সিএনজি অটোটেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি১৪৯১ এর পক্ষে নেতৃত্বে দিয়ে আসছিলেন নাছির উদ্দিন ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.বারেক। তারা দীর্ঘ এক যুগ ধরে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি শ্রমিক নেতা মো.রফিক ও রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে বাংলাদেশ অটোরিক্সা সিএনজি শ্রমিকলীগ রেজি নং২০৪৪ এর পেকুয়ার কমিটি সিএনজি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। দুই রফিকের নেতৃত্বে শ্রমিকরা গত কিছুদিন আগে উপজেলার ৯টি টিকিট কাউন্টার দখল নেয়।
ঘটনার দিন দুপুরে ও দুই রফিক কয়েকজন শ্রমিক ও কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে ফাঁসিয়াখালী স্টেশনে গিয়ে টিকেট ও লাইনম্যান দিয়ে কাউন্টার দখল করতে গেলে সংঘর্ষ লেগে যায়। আধিপত্য ও কাউন্টার দখল বেদখলকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানান, নাছির ও বারেকের নেতৃত্বে সিএনজি সংগঠন দখল করে দীর্ঘদিন ধরে নিরীহ সিএনজি শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিলো। নতুন একটি সিএনজি লাইনে দিলে তাদের পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অটোরিক্সা সিএনজি শ্রমিকলীগ পেকুয়ার সভাপতি মো.রফিক বলেন, শ্রমিক পরিচয় দিয়ে একযুগ ধরে একটি সিন্ডিকেট চাঁদাবাজিতে মেতে ছিল। তাঁরা শ্রমিকের রক্ত চুষে খেয়েছে। কিছুদিন আগে প্রকৃত শ্রমিকরা তাদের বিতাড়িত করে। সকালে ১০-১৫ জনের অস্ত্রধারী পেকুয়া বাজারে এসে লাইনম্যানদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে দুটি কাউন্টারে টোকেন দেওয়া শুরু করে। দুপুরে ফের বাজারে এসে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে। এ সময় শ্রমিকরা বাঁধা দিলে তাদের উপর মামুনুর রশীদ, মির্জা বাহাদুর, হানিফ, হারুনসহ বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।
অপর দিকে কক্সবাজার জেলা অটোরিকশা সিএনজি অটোটেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের পেকুয়ার সভাপতি নাছির উদ্দীন জানান সিএনজি কাউন্টার দখল করতে জয়নাল, হেলালসহ বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমার সিএনজি শ্রমিকদের উপর অহেতুক গুলিবর্ষণ করে কাউন্টার দখল করতে চেষ্টা করে। তারা কোন শ্রমিক সংগঠনের কেউ নই এবং তারা কোন শ্রমিক নই। সাধারণ সম্পাদক বারেক ভাই বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছেন।
এদিকে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাজার এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া, গুলি বর্ষণের ঘটনায় প্রায় তিন ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ ছিল। পরে পেকুয়া থানা পুলিশ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।